অসমে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের নাম।
এনআরসি (NRC) বা নাগরিক পঞ্জি ঘিরে আতঙ্ক (Panic over NRC) ছড়াচ্ছে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে। মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌরসভা বা অন্য সরকারি দফতরে শয়ে শয়ে মানুষকে লাইন দিতে দেখা গেল। তাঁরা লাইন দেন জন্মের শংসাপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য। তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে কোনও নাগরিক পঞ্জি হবে না। কিন্তু তারপরেও রাজ্য জুড়ে অনেকেই আগাম সতর্কতা হিসেবে জরুরি নথি সংগ্রহ করে রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন। অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে বিরাট সংখ্যক হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়ার পর রাজ্যে আতঙ্ক বাড়তে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত আতঙ্কের কারণে ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতা পৌরসভার সদর দফতর বা অন্য ডিভিশন অফিস কিংবা বিডিও অফিস— লাইন সর্বত্রই চোখে পড়েছে। কলকাতা পৌরসভার সদর দফতরের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো ৭৫ বছরের অজিত রায় বলছেন, ‘‘আমি কেএমসি অফিসে এলাম আমার জন্মের শংসাপত্রের জন্য। বহু আগেই এটি হারিয়ে গিয়েছিল। আমি শুনেছি এ রাজ্যে এনআরসি তৈরি হলে জন্ম শংসাপত্র থাকলে প্রমাণ করা যাবে আমি এদেশের নাগরিক।''
বাংলায় এনআরসি নিয়ে ভীতি তৈরির জন্য বিজেপিকে ধিক্কার, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
৫৫ বছরের বিমল মণ্ডল দাঁড়িয়েছিলেন কেএমসির ল্যান্ড রেকর্ড দফতরের সামনে। পাঁচ দশক আগে তাঁর বাবা-মা যে জমি কিনেছিলেন তার কাগজের জন্য।
একই ছবি রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের সরকারি ও পঞ্চায়েত অফিসের সামনেও।
দেশজুড়ে এনআরসি করা হবে, জানালেন অমিত শাহ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৫ বছরের খালেক মোল্লা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘এদেশে জন্মে ও বেড়ে ওঠার পর যদি আমাদের বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয় তাহলে আমরা কী করব? আমার বাবা যে এদেশে জন্মেছিলেন সে কাগজ আমি কোথা থেকে জোগাড় করব?''
জেলায় এখনও পর্যন্ত এনআরসি আতঙ্কে ছ'জনের মৃত্যু হয়ে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। এঁদের মধ্যে দু'জন আত্মহত্যা করেন বলে জানা যাচ্ছে। পুরনো নথি খুঁজে না পেয়ে তাঁরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা যাচ্ছে। বাকি চারজন অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছে। বহু গ্রামবাসীই গ্রামের বিভিন্ন সরকারি দফতরের বাইরে লাইন দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য।
অসমে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের নাম। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ওই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে তালিকায় নাম না থাকা মানুষদের মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষ হিন্দু।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা মানুষকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি। বাংলায় কোনও এনআরসি হবে না। তৃণমূল সরকার তা কখনওই অনুমোদন করবে না। যতদিন তৃণমূল সরকার রয়েছে, একটি মানুষের গায়েও হাত দেওয়া যাবে না।''
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে তিনি এটি হতে দেবেন না।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যে এনআরসির জন্য যাঁদের মৃত্যু হয়েছে সেজন্য দায়ী কেবল তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, যে হিন্দুরা অন্য দেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে নাগরিক সংশোধন বিলের অধীনে। এবং তারপর নাগরিক পঞ্জি তৈরি হবে অনুপ্রবেশকারীদের দূর করার জন্য।''
দেখুন ভিডিও
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)