This Article is From Jul 27, 2019

'২১ জুলাইয়ের মঞ্চে আমার নাম! ‘দিদি’র কাছে আমি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ?': অঞ্জনা বসু

‘কতবার আর অঞ্জনা দেবীকে বিজেপি দলে নেবে? ওদের কি লোক কম পড়েছে? বলুন, তাহলে আমি লোক পাঠাচ্ছি’----২১ জুলাইয়ের শহীদ মঞ্চে এভাবেই কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীও মানেন ওঁকে!

কলকাতা:

‘কতবার অঞ্জনা দেবীকে বিজেপি দলে নেবে? ওদের কি লোক কম পড়েছে? বলুন, তাহলে আমি লোক পাঠাচ্ছি'----২১ জুলাইয়ের শহীদ মঞ্চ থেকে এভাবেই তাঁকে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরে সোমবার শাসকদল, নিজের দল, রাজনৈতিক জীবন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এনডিটিভি-র কাছে মুখ খুললেন অঞ্জনা বসু। সাক্ষী উপালি মুখোপাধ্যায়

প্রশ্ন: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী নাম নিলেন অঞ্জনা বসুর! বিরাট ব্যাপার ঘটিয়ে ফেললেন?

উত্তর: (হেসে ফেলে) আমিই খুব অবাক হয়ে গেছি! মুখ্যমন্ত্রী শহীদ মঞ্চ থেকে আমার নাম নিচ্ছেন! ভাবতে অবাক লাগছে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার গুরুত্ব সত্যিই এতটা? মঞ্চে সাধারণত সেই মানুষেরই নাম নেওয়া হয়, যিনি মূল্যবান। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, যেদিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীত্ব সামলেছেন সেদিন থেকে উনি কিন্তু আমায় আলাদা সম্মান জানিয়ে এসেছেন। কথায় ব্যস্ত থাকুন কি অনেক দূরে বসে--- দেখলেই হাত তুলে নমস্কার-প্রতিনমস্কার জানিয়েছেন। সাংঘাতিক ওঁর সৌজন্যবোধ। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওঁকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। ওঁর জয়টাও ঐতিহাসিক। ৩৪ বছরের বাম রাজত্ব ভেঙে উনি নিজেকে সেই জায়গায় প্রমাণ করেছেন। অনেকবার আমাকে ওঁর দলে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু ততদিনে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছি। পরে দেখলাম, ভালোই করেছি। কারণ, ওঁর মত এবং ওঁর লোকজনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারতাম না। ইদানিং, ওঁর লোকেরা যেন বড্ড কলার তোলা মানুষজন। তবে দিদির প্রতি আমার কোনও বিদ্বেষ নেই। দুঃখ-ক্ষোভ আছে। উনি অনেক কিছু করতে পারতেন। করেননি। ওঁকে অনেকেই ‘ব্যবহার' করেছেন, করছেন এখনও। এসবে আমি নেই। 

প্রশ্ন: তাই আপনি বিজেপিতে? যেদিকে এখন বাংলা স্টুডিওপাড়া হেলছে! নাকি অঞ্জনা ভৌমিক দূরদর্শী, তাই?

উত্তর: এটাই ঠিক (হাসি), অঞ্জনা দূরদর্শী। আসলে, আমি খুবই নীতি-নিয়মবাগীশ। গত পাঁচবছর আগে যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, সেই সংগঠনও একই পথের পথিক। এটাই বিজেপি-র প্রতি আমার প্রধান আকর্ষণ। কেননা, আমি যখন রাজনীতিতে আসি তখন সবাই সবুজ শিবির ঘেঁষা। তার যথেষ্ট কারণও ছিল। যাই হোক, আমি যখন গেরুয়া শিবিরে গেলাম সমস্ত পরিচিত আমার বিরুদ্ধে গেলেন। তাঁদের উষ্মা, স্রোতের বিরুদ্ধে হেঁটে, শাসকদলের বিরাগভাজন হয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছিস? মাথাটা কি একেবারেই গেছে! সেদিন আমি বলেছিলাম, খুব ভুল বোধহয় করছি না। আমি, আমার দল যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারি তাহলে পাঁচবছর পরে আমিও থাকব। দলও থাকবে। আর তার সঙ্গে সবুজ শিবির থেকে অনেক লোক আসবে আমাদের কাছে। আমার কথা কিন্তু সত্যি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার, টেলিপাড়ার একঝাঁক তারকা চলে এসেছেন বিজেপি শিবিরে।

প্রশ্ন: আগেকার শিল্পীরাও রাজনীতিমনস্ক ছিলেন। তবে এখনকার মতো সরাসরি যোগ দিতেন না। রাজনীতির সঙ্গে শিল্পের এই মেলামেশা কি অভিপ্রেত? নাকি পরস্পরের দূরে থাকাই ভালো?

উত্তর: অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, হেমা মালিনী, ধর্মেন্দ্র---এঁরাও তো রাজনীতিতে এসেছেন। তবে এটা ঠিক, তাঁদের সময়ে বা আমার ছোটবেলাতেও শিল্পীদের রাজনীতিতে যোগদানের এমন ঢল ছিল না। তখনকার মানুষ একটা কাজ নিয়ে থাকতেন। মাঝেমধ্যে, রাজনীতি নিয়ে চায়ের কাপে তর্কের তুফান তুলতেন। কিন্তু, যুগ বদলের সঙ্গে বদলেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। এখনকার মানুষ ভী-ষ-ণ রাজনৈতিক সচেতন। সবাই দেশের জন্য, রাজ্যের জন্য কিছু করতে চান। আমিও চাই। সেই জায়গা থেকেই হয়ত শিল্পীরাও এখন রাজনীতিমুখো। যেমন, আমি আমার উপার্জনের থেকে নিয়মিত সঞ্চয় করি তাঁদের জন্য, যাঁরা আমার পরিবারের নন। কিন্তু আমাকে ঘিরে আছেন সর্বক্ষণ। শুনতে বাড়াবাড়ি লাগলেও আমি এটাই করি। 

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি অন্যায্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়

প্রশ্ন: মানুষের কাজ করার জন্য বিজেপি-ই কেন?

উত্তর: কারণ, এদের নিয়মানুবর্তিতা আছে। মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে আছে। কেউ করতে চাইলে তাকে সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আর যাই হোক, এখানে পার্টির নামে দাদাগিরি নেই। গত পাঁচ বছরে হুগলি কেন্দ্রে সেই সময়ের সাংসদ চন্দন মিত্রের সঙ্গে অনেক রোড শো করেছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। মাঝে দুই-আড়াই বছর আমি রাজনীতি-অভিনয় থেকে দূরে ছিলাম। ছেলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে।এখন আবার আমি নিয়মিত কাজ করছি। ভবিষ্যতেও করব। যাঁরা এখন আসছেন, তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের মতো বাকি যাঁদের পিঠ ঠেকেছে তাঁদের বাঁচাতে আসছেন। সত্যিই তো, নিজের জন্য, রাজ্যের জন্য, দেশের জন্য ভাবার কাজ তো আমাদের নয়! আমরা ভাবব অভিনয় নিয়ে, চিত্রনাট্য নিয়ে। দেশের-দশের ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর। যাঁকে আমরা ভোটে জিতিয়ে এনেছি। তিনি করছেন না বলেই আমাদের পা বাড়াতে হচ্ছে!

প্রশ্ন: আপনার কথায়, গত ১০ বছরে শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কিছুই করেননি?

উত্তর: ৩৪ বছরের বাম রাজত্বকে টলিয়ে, ঐতিহাসিক ভাবে জিতে নিজের দল নিয়ে যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে নিয়ে আমার এবং আমার মতো মানুষের অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন ছিল। গত ১০ বছরে তা ধূলিস্মাৎ। কলকাতার সৌন্দর্যায়ন ছাড়া আর কিচ্ছু করেননি তিনি। যে সিঙ্গুরকে নাকের ডগায় দুলিয়ে ভোটে জিতেছেন সেখানে শিল্প এল কই? ঘাস পরিষ্কার করা, দেওয়ালে, ফুটপাথে নীল-সাদা রং করা, ত্রিফলা আলো লাগানো--- এগুলো শিল্প? কালকেও দিদি বলেছেন, দক্ষিণ ভারতে থেকে নাকি সবাই শিল্প করতে এখানে আসতে চাইছেন! অবাক কাণ্ড। কী শিল্প করবেন তাঁরা? আমি যখন সিঙ্গুরে গেছি তখন চাষী বউরা হাতে-পায়ে ধরে কেঁদে ফেলেছেন, দিদি আমাদের পেটে অন্ন নেই। আমরা টাটা-বিড়লা বুঝি না। কারখানা আসুক। আমরা খেয়ে-পড়ে বাঁচি। এই তো করেছেন দিদি! ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। জানেন তো, মানুষের 'নিঃশ্বাস' যার লাগে তারই সর্বনাশ হয়। দিদিরও সেই দশা।

oo0tgg7g

প্রশ্ন: অর্থাৎ, যাঁরা জিতিয়ে এনেছিলেন তাঁরাই আজ বিরূপ?

উত্তর: একদম। ক্ষমতায় আসার আগে দিদি এক ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পরে দিদির অন্য রূপ। বুঝতে কষ্ট হচ্ছে, কোনটা আসল দিদি! যাঁরা তাঁকে আনলেন, যাঁরা তাঁর হয়ে লড়লেন আজ তাঁদের প্রতিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরূপ। কেন? ছোট ছোট ডাক্তার ছাত্রদের প্রতি রাগ। টিচাররা অনশন করছেন। উনি কারোর কাছে যাবেন না! এত ইগো! উনি তো মাতৃস্বরূপিনী। উনি গিয়ে দাঁড়ালে যদি সমাধান হয় তো যেতে অসুবিধে কোথায়?

সিবিআই ভয় দেখিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে যেতে বাধ্য করছে, একুশের মঞ্চে দাবি মমতার

প্রশ্ন: বিজেপির বিরুদ্ধেও কিন্তু অভিযোগ রয়েছে শাসকদলের। আপনারা ধর্মগন্ধী, বর্ণবিদ্বেষী। আপনাদের জয় শ্রীরাম ধ্বনি কোনও রাজনৈতিক দলের স্লোগান হতে পারে না...

উত্তর:  জয় বাংলা কি আমাদের? দিদি যদি বিদেশের স্লোগান ধার করে বলতে পারেন তাতে ক্ষতি নেই। যত দোষ বিজেপির! শ্রীরাম বা সীতা তো আমাদের দেশেরই। আমরা আর যাই হোক কোথাও থেকে স্লোগান ধার করছি না। আর ওটা বিজেপির স্লোগান হতে যাবে কেন? তৃণমূলও এই ধ্বনি দিতে পারেন। আমরা তো আমাদের দেশের সম্পদদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছি। এই যে জয় শ্রীরাম শুনলেই দিদি খেপে উঠছেন! এসব কি দিদিকে মানায়? এই জন্যেই তো সবাই ওঁকে আরও বেশি করে ক্ষেপাচ্ছে।

প্রশ্ন: দেশের উন্নয়নে আগামী দিনে বিজেপি এবং আপনার ভূমিকা কী?

উত্তর: গত পাঁচ বছরে আমরা দেশ, রাজ্যে কাজ করেছি বলেই আবার পাঁচ বছরের জন্য আমরা ফিরে এসেছি। দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে নিয়ে গেছেন। পাকিস্তানকে কোণঠাসা করেছেন। সন্ত্রাসবাদী হামলা কমেছে। বাজেট পেশের পর বিরোধীরাও চুপ। অর্থাৎ, আমরা কাজ করেই চলেছি। আরও করব। আর মাস তিনেকের মধ্যে আমায় একটা বড় দায়িত্ব দিতে চলেছে দল। আমার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। বড় অনুষ্ঠান করে জানানো হবে। তাই ক্রমশ প্রকাশ্য (হাসি)।

প্রশ্ন: যাঁরা নতুন এসেছেন তাঁদের মধ্যে আপনার চোখে কারা উপযুক্ত?

উত্তর: (হেসে ফেলে), আপনি মার খাওয়াতে চান? সবাই কিছু না কিছু লক্ষ্য, ভাবনা নিয়ে তো এসেছেন। যে, যাঁর মতো করে কাজ করবেন। কে, কতটা কাজ করতে পারবেন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে---বলি কী করে? তার মধ্যেও আমি নাম করব লামাদা-র, সৌরভ, দেবরঞ্জনদা, রূপার। এঁরা প্রয়োজনে শুটিং অফ করে কাজ করবেন, গ্যারান্টি।

চলছে গুলি, মানুষ লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে, ভিডিওতে দেখা গেল দৃশ্য

প্রশ্ন: নিন্দুকেরা বলছেন, যাঁরা অভিনয় বা ক্ষমতায় কমজোরি তাঁরাই বিজেপির হাত ধরে উঠে আসতে চাইছেন। সত্যি?

উত্তর: আসলে, গত কয়েক বছর ধরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও নাক গলিয়েছে শাসকদল। সবাই জানেন। ফলে, শাসকদলকে সাপোর্ট করলে কাজ পাবেন, নইলে নয়---এটা অনেকের ক্ষেত্রে হয়েছে। তাঁরা কী করবেন বলুন তো! তার মানে এটা নয়, এবার বিজেপি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়ি ঘোরাবে। প্রত্যেক অভিনেতা নিজের যোগ্যতায় কাজ, পুরস্কার পাবেন। বিজেপি করলেও, না করলেও। আমি অনন্ত সেই দিকটা দেখারই চেষ্টা করব। আমি কিন্তু ফ্লোরে রাজনীতি করি না। কেউ করলে তাঁকে বারণ করি। এখানেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র পার্থক্য।

প্রশ্ন: রূপা গাঙ্গুলিকে আগের মতো দলে দেখা যাচ্ছে না...কোনও সমস্যা?

উত্তর: এটা রূপাদি ভালো বলতে পারবেন। আমার সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ খুবই কম। আর আমি তো এই মাত্র বলেছি, কে, কতটা করতে পারবেন, লড়তে পারবেন---সেটা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। আমি কী করে বলব?

  

.