This Article is From Jul 23, 2020

তৃণমূলের নয়া কমিটি, রাজ্য কমিটিতে ছত্রধর মাহাতো

জেলা পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে জেলাগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করবে কোর প্যানেল

তৃণমূলের নয়া কমিটি, রাজ্য কমিটিতে ছত্রধর মাহাতো

দলে নয়া ও তরুণ নেতানেত্রীদের রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, তেমনই দলের প্রতি একাংশ নেতার ক্ষোভ প্রশমণেও চেষ্টা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো

কলকাতা:

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়া রাজ্য কমিটিতে জন সাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা তথা মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলে রদবদলে একদিকে যেমন বৃদ্ধতন্ত্রকে সরিয়ে তারুণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে, তেমনই ২১ জনের রাজ্য কমিটি এবং সবার ওপরে তৈরি করা হয়েছে ৭ জনের কোর প্যানেল। রাজ্য কমিটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে ২০০০ সালে লালগড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো। তাঁর সাজার মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর করে দেয় রাজ্য সরকার, এবং ভাল আচরণের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে মুক্তি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার কাঁটাপাহাড়ি এলাকায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রাণহানির চেষ্টা করায় ছত্রধর মাহাতোকে ২০০৯ এর ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। বিভিন্নরকম মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ভাল ফল করেছে বিজেপি, সেখানকার পদ্মবাগানের রমরমা কমিয়ে আবারও ঘাসফুল ফোটাতে ছত্রধর মাহাতোর ওপর তৃণমূলনেত্রী ভরসা রাখছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়াও বহিষ্কৃত সিপিআইএম নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময়ে তৃণমূল কংগ্রেস দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাপাধ্যায়ের কট্টোর সমালোচক বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিআইএম। একদিকে যেমন দলে নয়া ও তরুণ নেতানেত্রীদের  রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, তেমনই দলের প্রতি একাংশ নেতার ক্ষোভ প্রশমণেও চেষ্টা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজ্য কমিটি ও রাজ্য কো—অর্ডিনেশন কমিটিতে রাখা হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধন পাণ্ডেকে। বেশ কয়েকদিন ধরেই দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে রাজ্য কমিটিতে এনে ক্ষোভ প্রশমণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি বলে পরিচিত কোর প্যানেলে রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, গৌতম দেব, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শান্তা ছেত্রী। সরাসরি নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে এই কমিটি।

রাজ্য কমিটিতে রদবদল করার পাশাপাশি একাধিক জেলা সংগঠনেও ব্যাপক বদল করেছেন দলনেত্রী। তারমধ্যে রয়েছে, হাওড়া, কোচবিহার, পুরুলিয়া, নদিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ দিনাজপুর। এই জেলাগুলিতে পুরানোদের সরিয়ে নয়া মুখ আনা হয়েছে।

হাওড়া জেলা সভাপতি পদে আনা হয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষীরতন শুক্লাকে, কোচবিহারের দায়িত্বে প্রাক্তন সাংসদ পার্থ প্রতিম রায়, পুরুলিয়ায় গুরুপদ টুডু এবং বাঁকুডায় শ্যামল সাঁতরা। নদিয়ার দায়িত্বে দলের অন্যতম সাংসদ মহুয়া মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুরে গৌতম দাস, এবং দুলাল মুর্মুকে ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনিন্দ্য রাউতকে। বাদ পড়েছেন অরূপ রায়, অরূপ বিশ্বাস এবং রবীন্দ্র নাথ ঘোষ। তিনজনেই মন্ত্রিসভার সদস্য।

জেলা পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে জেলাগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করবে কোর প্যানেল। বিধানসভা নির্বাচনের দলের প্রবীণ নেতারা যাতে ঠিকমতো সম্মান পান, তারজন্য জেলার চেয়ারম্যান পদ তৈরি করা হয়েছে।  

এবারের রদবদলে বেশ কয়েকটি দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। প্রথমত যে জায়গাগুলিতে বিজেপির প্রভাব বেশি। দ্বিতীয়, যে জায়গাগুলিতে গোষ্ঠীকোন্দল বেশি রয়েছে, এবং যুব ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এছাড়াও দলের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে যে সব নেতাদের, সেগুলির দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা।

.