মার্কিন দেশে ঢুকতে গিয়ে মৃত্যু হল অস্কার মার্টিনেজ ও তাঁর ২ বছরের সন্তান
নিউ দিল্লি: আর পাঁচটা সাধারণ পরিবার যা চায়, নিরাপত্তা, নিশ্চিন্ত যাপন, অস্কার (Óscar Alberto Martínez Ramírez) তানিয়া (Tania Vanessa Ávalos) আর ভ্যালেরিয়াও (Valeria) ঠিক তেমনটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু মধ্য আমেরিকায় বসবাস করলে অত স্বপ্ন দেখতে নেই আসলে। আয়লান কুর্দির মুখ থুবড়ে পড়া লাল জামার শরীরটার কথা মনে আছে সকলের, সেই অ্যালবামেই জুড়েছে ২ বছরের ভ্যালেরিয়া আর তাঁর বাবা অস্কারের মরে যাওয়ার ২ টো দেহের ছবি।
ঠিক দু' বছরও হয়নি ভ্যালেরিয়ার। টলোমলো এই শিশুটি বড়ই ছটফটে, নাচে, পশুপাখির খেলনা নিয়ে জঙ্গল সাজায়, সবার চুলে গিয়ে চিরুণি নিয়ে আঁচড়ে দেয়। না, আসলে সে নাচত, খেলত, আঁচড়ে দিত, আর দেবে না কোনও দিন। মধ্য আমেরিকায় রিফিউজি হয়ে গেলে সবই একদিন অতীত হয়ে যায় অনেকের কাছে। বাবা, অস্কার আলবার্তো মার্টিনেজ রামিরেজ সারাক্ষণ কর্মব্যস্ত, কিছুকাল আগেই মোটরসাইকেল বেচে দিয়েছিলেন। আসলে এল সালভাদর (El Salvador) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার পরিবারকে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন পাকাপাকিভাবে। মার্টিনেজ ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া ভ্যানেসা আভালোস আমেরিকায় একটা ছোট্ট বাড়ি বানানোর স্বপ্ন বুনছিলেন। একটা নিরাপদ, নিশ্চিন্ত বাড়ি, আর বাচ্চার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
জলের অভাবে শুকোচ্ছে চেন্নাই! সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট উদ্বিগ্ন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর
ভবিষ্যৎ চেয়েই ১০০০ মাইল পাড়ি দেয় এই পরিবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে এসে লঙ্গরখানায় (Central American migrants) আশ্রয় নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তাঁরা। প্রতিদিন মধ্য আমেরিকান অভিবাসীদের উপর হওয়া অত্যাচার থেকে বাঁচতে এখন সকলেই প্রায় শরণার্থী। কিন্তু মেক্সিকোতে মাতমোরাস শহরের আন্তর্জাতিক সেতু ( international bridge in Matamoros) অব্দিই পৌঁছতে পারে তাঁরা। রবিবার, তাঁদেরকে জানানো হয় সেতুটি বন্ধ হয়ে গেছে এবং পরের দিন তাঁদের ওই সেতু পেরোতে বলা হয়। কিন্তু বাঁচার স্বপ্ন কাউকেই তো জিরোতে দেয় না। রিও গ্র্যান্ডের (Rio Grande) মেক্সিকান পার্শ্বে দাঁড়িয়ে তাঁদেরও মনে হয়েছিল, ওই তো আমেরিকা, বেশি দূর তো নয়। মার্টিনেজ ভ্যালেরিয়াকে কোলে করেই নেমে পড়েন নদীতে। সাঁতরে পার হয়ে নতুন জীবন খুঁজতে নেমে পড়েন কিন্তু, ওপাড়ে ব্রাউনসভিল, টেক্সাস (Brownsville, Texas) যাওয়ার আগেই নদী খেয়ে নেয় ২৫ বছর বয়সী বাবা এবং তার টলোমলো একরত্তি ভ্যালেরিয়াকে।
পরের দিন, মেক্সিকান পত্রিকা লা জর্নাদা (La Jornada) এবং পরবর্তীতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে (Associated Press) নদীর আবর্জনায় আটকে থাকা তাঁদের দেহের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। শেষ বারের মতো ভ্যালেরিয়া জড়িয়ে ধরেছিল বাবাকে। ২০১৫ সালে ভূমধ্যসাগরের পাড়ে সিরিয়ার শিশু আয়লানের কথা আবারও উস্কে দিল এই ঘটনা।
সোশ্যাল মিডিয়া ফের উত্তাল। সীমান্ত জুড়ে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আবারও লেখালেখিতে ঘি পড়েছে। মানবিক এই সংকটের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির নিন্দা করছেন সকলেই। এই নীতিগুলির মধ্যে একটি হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাস্টমস অনুশীলন ‘মিটারিং'। এই নীতির ফলে প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে থাকার অনুরোধ পাওয়া অভিবাসীদের সংখ্যা রাতারাতি কমে গিয়েছে।
নাম বিভ্রাট, ‘বিদেশি' মধুবালা দাসের জায়গায় তিন বছর জেলে বন্দি মধুবালা মণ্ডল
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা টিম ব্রাউনসভিলের উডসন মার্টিন বলেন, “এই বিশেষ ঘটনাটি আবারও বুঝিয়ে দিল মানবতাবিরোধী বর্তমান অভিবাসন এবং সীমান্ত নীতিগুলি কতখানি অপ্রয়োজনীয়, এসবের ফলেই এত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষ হিসাবেই দায়ী এই জন্য এবং আমাদেরই এটা ঠিক করতে হবে।" তিনি আরও বলেন, “ওই বাবার মৃত্যুর আসল কারণ সেতুতে মিটারিং নীতি।"
একটি সাংবাদিক সম্মেলনে, মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রেডর (Mexican President Andres Manuel Lopez Obrador) অভিবাসীদের মৃত্যুর ‘খুব দুঃখজনক' বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security) এবং মার্কিন কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (U.S. Customs and Border Protection) এই ঘটনার জন্য একটিও শব্দ খরচ করেনি। বুধবার, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (President Donald Trump) সীমান্ত অতিক্রম করার প্রয়াসকারী অভিবাসীদের সমস্যার জন্য ডেমোক্রেটদের দায়ী করেন।
কর্তৃপক্ষ গত মাসে সীমান্তে ১,৪৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করে। মাইগ্রেশন বা অভিবাসনের মাত্রা ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। গত সপ্তাহান্তেই, বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্টরা ব্রাউনসভিলের পশ্চিমে হাইডালগো কাউন্টিতে নদীর একটি অংশে চারটি লাশ পেয়েছে, যাঁদের তিনটিই শিশুর। চতুর্থটি বছর ২০র এক যুবতীর।
গত বছর দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে বর্ডার প্যাট্রোলের তথ্য অনুযায়ী ২৮৩ জন অভিবাসীর মৃত্যুর মধ্যে, প্রায় ৯৬ জন রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালিতে মারা গেছেন।