মুখ্যমন্ত্রী Mamata Banerjee শেষবার PM মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন গত বছরের মে মাসে। (ফাইল চিত্র)
কলকাতা: বুধবার দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর তাঁর এই সাক্ষাতের বিষয়টি ঘিরে তীর্যক মন্তব্য করার সুযোগ হাতছাড়া করল না ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। এটা আসলে "সুবিধাবাদী রাজনীতির সর্বোত্তম উদাহরণ" , বলল তাঁরা। পাশাপাশি রাজধানীতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর (PM Modi) সঙ্গে নিজে থেকেই তৃণমূল নেত্রীর এই সাক্ষাতের চেষ্টার বিষয়টিকে "নিজেকে সিবিআইয়ের খপ্পর থেকে বাঁচানোর মরিয়া প্রচেষ্টা" বলে কটাক্ষ করল গেরুয়া দল। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই বৈঠকের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। এরপরেই রাজ্য সচিবালয়ের সূত্র মারফৎ জানা যায় বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে সাক্ষাৎ করবেন।
আজই (মঙ্গলবার) তিনি নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তৃণমূল নেত্রীর এই আগ্রহকে ঘিরে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। তিনি বলেছেন, "আমরা সবাই জানি যে লোকসভা নির্বাচনের সময় এবং তারপরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। তিনি কখনও ফেডারাল কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধা রাখেননি এবং এমনকী তিনি একথাও বলেছিলেন যে তিনি অনুভব করেন না যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদিজিকে সম্মান করা দরকার"।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন মমতা, কথা হতে পারে কোন কোন বিষয়ে?
"এখন হঠাৎ কেন এবং কী কারণে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন তা একেবারেই ওপেন সিক্রেট । এর মাধ্যমে তিনি যে আসলে একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ তাও বোঝা যাচ্ছে। এটা প্রমাণিত যে তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করতে যে কোনও দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারেন এবং কাজ উদ্ধার হয়ে গেলেই তা ভুলে যেতে পারেন", বলেন রাহুল সিনহা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির অপর এক প্রবীণ নেতার মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে এবং তাঁর দলের নেতাদের সিবিআইয়ের খপ্পর থেকে বাঁচাতে দিল্লিতে যাচ্ছেন, কেননা বাংলার বহু কোটি চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই।
ওই নেতা আরও বলেন, "এটি সবার কাছেই স্পষ্ট যে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং তাঁর দল তৃণমূলের নেতারা সিবিআইয়ের হাতে যাতে না আসেন সেই জন্য তিনি একটি ব্যক্তিগত আবেদন করতেই দিল্লি যাচ্ছেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমাদের দলের হাইকমান্ড দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে কখনও আপস করবে না। যাঁরা জনসাধারণের অর্থ লুট করেছেন তাঁদের সকলকেই জেলে যেতে হবে"।
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেছে যে রাজ্যের উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিকারের মধ্যেই পড়ে।
"পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের ভিত্তিহীন এই দাবি বন্ধ করা উচিত। ফেডারেল কাঠামোয় একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে। প্রস্তাবিত বৈঠকটি রাজ্যের উন্নয়নমূলক বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত", বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রস্তাবিত বৈঠকটি তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজনৈতিক রং পেয়েছে কারণ এটি এমন এক সময় হতে চলেছে যখন সারদা কেলেঙ্কারি মামলায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের পিছনে আদা জল খেয়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
নোটিশ উপেক্ষা রাজীব কুমারের, সিবিআইকে জবাব দিল রাজ্য
এর আগে এই বছরের মে মাসে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও অংশ নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জুনে নীতি আয়োগের সভাতেও যোগ দেননি তিনি।
এদিকে মোদি-মমতার আসন্ন সাক্ষাৎ নিয়ে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের অপর দুই বিরোধী দল সিপিআই (এম) এবং কংগ্রেসও। তাঁরা বলে যে, মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রস্তাবিত বৈঠকটি আসলে "রাজনৈতিক ম্যাচ ফিক্সিং" এর একটি অংশ যে খেলাটা বাংলার মাটিতে খেলে চলেছে তৃণমূল এবং বিজেপি ।
প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে তৃণমূল এবং বিজেপি বাংলায় একটি গড়াপেটার ম্যাচ খেলছে। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই যাতে ধীরগতিতে এগোয় তা নিশ্চিত করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন"।