খোদ রাজধানীর বুকে শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত রাজনৈতিক মহল।
হাইলাইটস
- অনাহারে মারা গিয়েছে ওই তিন শিশুকন্যা, জানাল ময়নাতদন্ত রিপোর্ট
- গত শনিবার থেকেই ওই শিশুদের রিকশাচালক বাবা নিখোঁজ
- ফরেনসিক দল তাদের ঘর থেকে ওষুধের শিশি, ডায়েরিয়ার পিল উদ্ধার করেছে
নিউ দিল্লি: মঙ্গলবার সকালবেলা। তিন সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এলেন এক মা। তিনটি কন্যা। একজনের বয়স আট, বাকি দুজনের, যথাক্রমে- চার ও দুই। চিকিৎসকরা ওই তিনজনকেই পরীক্ষা করে দেখে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করলেন। কিন্তু কীভাবে মারা গেল ওরা? প্রশ্ন করেছিল কর্তব্যরত পুলিশ। উত্তরে প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতে অজ্ঞান হয়ে যেতে যেতে ওই বাচ্চাদের মা বলল একটিই কথা- আমাকে একটু খেতে দিন…
প্রাথমিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, ওই তিনটি শিশুই মারা গিয়েছে অনাহারের কারণে। তারা কিচ্ছু খায়নি আটদিন ধরে। টানা আটটা দিন। সোমবার রাতেই তারা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। মঙ্গলবার তিন বোনের মৃত্যু হয় প্রায় একইসঙ্গে।
“তাদের শরীরে কোনও ফ্যাট অবশিষ্ট ছিল না। ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে খাদ্যনালী সম্পূর্ণ ফাঁকা। ভয়ঙ্কর অনাহার ও অপুষ্টির ফলেই ঘটেছে এই ঘটনা”, বলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট অমিতা সাক্সেনা।
“আমার পনেরো বছরের চিকিৎসক জীবনে এমনটা আর কখনও দেখিনি”, বলেন আরেক চিকিৎসক।
খোদ রাজধানীর বুকে এই তিন শিশুকন্যার অনাহারে মৃত্যুর খবরে সব মহলই স্তম্ভিত।
এই রাজ্য থেকে দিল্লিতে গিয়েছিল পাঁচজনের ওই পরিবারটি। ওই শিশুদের বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে পূর্ব দিল্লির মান্ডওয়ালিতে এসে উপস্থিত হয় তারা। আসার পর থেকেই তাদের বাবা, পেশায় রিকশাচালক, নিখোঁজ বলে জানান প্রতিবেশিরা। তাঁর রিকশা চুরি হয়ে যাওয়ায় কাজের খোঁজে পরিবার নিয়ে দিল্লি চলে এসেছিলেন ওই ব্যক্তি।
পুলিশ জানায়, ওই মহিলাকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ মনে হচ্ছিল। যে ঘরে ওই পরিবারটি তিনদিন ধরে ছিল, সেখানে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকটি ওষুধের বোতল, ডায়েরিয়ার পিল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করে ফরেনসিক দল।
তিন বোনের মধ্যে ছোট দুই বোন বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। ডায়েরিয়া হয়েছিল তাদের। ক্রমাগত বমি হচ্ছিল। যদিও, তিন বোনের মধ্যে বড়জন, যে স্কুলে যেত এবং সেখানে মিড-ডে মিল পাওয়ার কথা তার, সে কীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ল অনাহারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে ওই দুই দলের নেতারাই তীব্র আক্রমণ করেন আপ সরকারকে।
“এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। আমি এটা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কেন্দ্র তো সস্তায় খাদ্য পাঠায়। দিল্লি সরকারের কাজ হল সেই খাদ্য সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া। কিন্তু তা হচ্ছে কই”, প্রশ্ন তোলেন বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন মৃত শিশুদের মায়ের সঙ্গে দেখা করে এসে বলেন, “ওঁর মুখ থেকে পুরো ঘটনা শুনে চমকে গিয়েছি আমি। এটা সরকার এবং এই সমাজ ব্যবস্থারই ব্যর্থতা”।
রাজনৈতিক কাদা ছেটানো চলতেই থাকে। নেপথ্যে নীরবে অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ফুটফুটে শৈশব।