পুলিশকে জনসমক্ষে মারধর করার হুমকি দেন দিলীপ ঘোষ। (ফাইল চিত্র)
হাইলাইটস
- পুলিশকে বিবস্ত্র করে জনসমক্ষে প্রহার করার হুমকি দিয়ে বিতর্কে দিলীপ ঘোষ
- তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ
- পুলিশের পাশাপাশি শাসক দলের প্রতিও আক্রমণাত্মক মন্তব্য দিলীপের
কলকাতা: বিজেপি (BJP) রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) আবারও বিতর্কে জড়ালেন এক জন সমাবেশে রাজ্যের পুলিশ ও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মন্তব্য করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দলীয় কর্মীদের তৃণমূল কর্মী ও পুলিশদের নিগ্রহ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি পুলিশকে বিবস্ত্র করে জনসমক্ষে প্রহার করার হুমকিও দেন তিনি। পি চিদাম্বরমের গ্রেফতারি প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, যদি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিদাম্বরমকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় তাহলে তৃণমূল কেবল ‘মশামাছি'র মতো নগণ্য। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। সরকারি কর্মীদের প্রতি হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় এক জন সমাবেশে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ হোক বা তৃণমূল, ছুঁড়ে ফেলুন। আমি দায়িত্ব নেব... আমি বলছি, আপনারা যদি তা না করেন, তবে আপনারা সত্যিকারের বিজেপি নন। আপনারা বিজেপি কার্যকর্তা হতে পারবেন না।''
রাজ্যের তৃণমূল নেতারা দিল্লিতে রাজনৈতিক পর্যটনে বেরিয়েছেন: দিলীপ ঘোষ
তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় দিলীপের এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই ধরনের প্ররোচনামূলক মন্তব্যের লক্ষ্যই হল রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করা।'' সিপি(আই)এম নেতা সুজন চক্রবর্তী তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান একটি শব্দপ্রয়োগে। তিনি বলেন, ‘‘স্কাউন্ড্রেল।''
দিলীপ ঘোষ পুলিশে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানান, পুলিশ এরই মধ্যে তাঁর নামে ২২টি মামলা রুজু করেছে। কিন্তু যতদিন তাঁদের দলীয় কর্মীদের উপরেল অত্যাচার হবে, তিনি এই ধরনের কথা বলবেন।
‘তৃণমূল মারলে পুলিশকেও ধরে মারুন', বিজেপি কর্মীদের নির্দেশ দিলীপ ঘোষের
ওই সমাবেশের একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘আমরা দেশের বহু মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি। যদি আপনাদের ঠাকুরদা চিদাম্বরম জেলে বসে ভাত খায়, তাহলে আপনারা কী? যে মানুষটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন, অর্থমন্ত্রী ছিলেন, আজ তাঁর স্নান করার, ঘুমনোর জায়গা নেই। তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছেন। আজ তাঁকে মেঝেতে শুতে হচ্ছে। আপনারা আমার কাছে একটা মশা বা মাছির মতো।''
পি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৭ সালে বিদেশ থেকে ৩০৫ কোটি টাকার তহবিল পাওয়ার জন্য আইএনএক্স মিডিয়াকে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন তিনি, বিনিময়ে তাঁর ছেলে কার্তি চিদাম্বরমের সংস্থাকে বিরাট অঙ্কের ঘুষ দেয় আইএনএক্স মিডিয়া।
চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলের নাম জানিয়েছেন আইএনএক্স-এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা পিটার মুখোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তাঁদের মেয়ে শিনা বোরাকে হত্যা করেছেন। এই মুহূর্তে তাঁরা জেলে রয়েছেন। যদিও চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রয়েছে পুলিশ, এই অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাড়াতাড়ি কিছু ভুলি না। আমরা এত সহজে ভুলে গেলে চিদাম্বরম জেলে থাকতেন না, তাই না? সব কিছুই নোটবুকে লেখা থাকছে। পরিবর্তন আসছে। যারা সেটা বুঝতে পারছেন না তাঁদের মোটা চামড়া। সাবধান! আপনি তৃণমূল নেতা হোন বা তৃণমূল চামচা অথবা পুলিশ চামচা, আমি কাউকে ছাড়ব না।''
পুলিশের প্রতি এই ধরনের মন্তব্য এই প্রথম করলেন না বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এর আগে জুন মাসে ও গত বছরের ডিসেম্বরেও এই ধরনের মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে ক'দিন আগেই রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে গেরুয়া দলের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক কাপ চায়ে একত্রিত হওয়ার ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। যদিও দিলীপ অস্বীকার করেছেন যে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলা এই চা চক্রের উদ্যোগটি জনসাধারণের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম "দিদিকে বলো"-কে পাল্লা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তিনি বলেন যে এই চা চক্রের মাধ্যমে আসলে আরও বেশি করে জনগণের কাছে পৌঁছতে চায় গেরুয়া দল।
"আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বাস করি। সুতরাং সেপ্টেম্বর থেকে এই চা চক্র চালু করব, গণ প্রচারের কর্মসূচি হিসাবে এক কাপ চায়ে একত্রিত হব। আগে শুধু আমি এটা করতাম, এখন অন্যান্য নেতারাও এটা করবেন" জানালেন দিলীপ ঘোষ।