This Article is From Jul 15, 2019

নেই খাবার, লাইফ জ্যাকেট! ভাইপোকে কাঁধে করে ৫ দিন গভীর সমুদ্রে বেঁচে রইলেন রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথকে যখন উদ্ধার করা হয়, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ভেসে থাকতে থাকতে একসময় ডুবে যায় তাঁর ভাইপো।

নেই খাবার, লাইফ জ্যাকেট! ভাইপোকে কাঁধে করে ৫ দিন গভীর সমুদ্রে বেঁচে রইলেন রবীন্দ্রনাথ

এমভি জাওয়াদের সদস্যদের চোখে পড়ায় অবশেষে জীবন্ত উদ্ধার করা হয় রবীন্দ্রনাথকে

কলকাতা:

গল্পটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ে লেখেননি, গল্পটা ঠিক ওল্ড ম্যানেরও নয়। তবু গল্প সমুদ্র যাপনের। গল্প চরম প্রতিকূলতায় টিকে থাকার, গল্প বেঁচে ফেরার। খাবার নেই একফোঁটা, এমনকি জলে ভেসে থাকতে হলে আবশ্যিক যে লাইফ জ্যাকেট- তাও নেই! বাঁশের খুঁটি ধরে উত্তাল বঙ্গোপসাগরে (Bay of Bengal) পাঁচ দিন ধরে ভেসে থাকার এ এক রূপকথা! গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার উলটে নিখোঁজ জেলেদেরই একজনের গল্প এটা। কাকদ্বীপের জেলে রবীন্দ্রনাথ দাশকে (Rabindranath Das) শেষমেশ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের উপকূলের একটি বাংলাদেশি জাহাজ। চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আনা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। গত ৬ জুলাই মাঝ সমুদ্রে তুমুল ঝড়ের সময় ডুবে যায় তাঁর ট্রলার, একে একে মারা যায় অন্য সঙ্গীরাও। কেবল বৃষ্টির জল খেয়ে টানা ৫ দিন সমুদ্রেই ভেসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এমভি জাওয়াদের (ship MV Jawad) সদস্যদের চোখে পড়ায় তাঁকে অবশেষে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়।

 ‘চরিত্র' নিয়ে সন্দেহ! ১৯ বছরের প্রেমিকার মাথা থেঁতলে মেরে ফেলল প্রেমিক

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের নারায়ণপুর থেকে ট্রলারে রওনা হন রবীন্দ্রনাথ দাশ। এফবি নয়ন-1 ( FB Nayan-I) এর মাস্টার ছিলেন তিনি। ৪ জুলাই ১৪ জন জেলেসহ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

মাঝসমুদ্রে ট্রলারটি ভেঙে ডুবতে শুরু করলে ওর মধ্যেই আটকা পড়েন তিনজন জেলে। রবীন্দ্রনাথ এবং অন্য ১১ জন সমুদ্রেই লাফ মারেন। সমুদ্রের মধ্যে জ্বালানি নিয়ে আসা ড্রামগুলিকে খালি করে বাঁশ এবং দড়ি দিয়ে একসাথে বেঁধে ভেসে থাকেন তাঁরা। যদিও এই খড়কুটো বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি সকলকে। দিন কয়েক যেতে না যেতেই একে একে তাঁর ১১ জন সহকর্মীই জলে ডুবে যান। অবিশ্বাস্যভাবে তখনও ভেসে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। উত্তাল সমুদ্রে, একা অভুক্ত দিন রাত ভেসে থাকেন তিনি।

অবশেষে, ১০ জুলাই চট্টগ্রামের কাছে একটি বাংলাদেশি ভেসেলের (Bangladeshi vessel) চোখ পড়ে তাঁর উপর। দুই ঘণ্টার টানা প্রচেষ্টার পর শেষমেশ উদ্ধার করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। কলকাতায় পৌঁছনোর একদিন পরে তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, “যতটুকু আমার যা মনে পড়ছে, আমার ট্রলারটি ডুবে যেতে শুরু করে এবং আমরা জলে লাফিয়ে পড়ি। জলেই ভেসেছিলাম আমি। এই এতটা সময় আমি কিচ্ছুটি খাইনি। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বিশাল বড় বড় ঢেউ ছিল সমুদ্রে। একমাত্র বৃষ্টি হলে সেই জল খেতাম।”

 বিনোদন পার্কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, রাইড ভেঙে গিয়ে নিহত ২, আহত ২৭

অবিশ্বাস্যভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নিজের বেঁচে ফেরার আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে ওই জলে ভেসে থাকা অবস্থায় একটি ঘটনাতেই। রবীন্দ্রনাথকে যখন উদ্ধার করা হয়, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ভেসে থাকতে থাকতে একসময় ডুবে যায় তাঁর ভাইপো। ভাইপোর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকাচ্ছন্ন তিনি।

সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আমরা একসঙ্গেই ভাসছিলাম, ওর লাইফ জ্যাকেটও ছিল। কিন্তু ও প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল। তাই দিন কয়েক ধরে আমিই ওকে জলের মধ্যেই কাঁধে নিয়ে ভেসেছিলাম। কিন্তু আমাকে যখন ওই জাহাজটা উদ্ধার করে বাঁচিয়ে নেয়, তার ঘণ্টা খানেক আগেই ভাইপো ডুবে যায়।”

.