This Article is From Oct 08, 2018

Durga Puja 2018: নৌকা, গজ, ঘোটক, দোলা সিংবাহিনীর একি লীলা - যাতায়াতে দুর্গা

দেবীর গমনাগমন রবিবার বা সোমবার হলে তাঁর যানবাহন হয় গজ৷ আর শনিবার বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে৷ কিন্তু, বৄহস্পতিবার বা শুক্রবার হলে তিনি দোলায় যাতায়াত করেন৷ আর বুধবার হলে তাঁর যাতায়াতের যানবাহন হয় নৌকা৷

Durga Puja 2018:  নৌকা, গজ, ঘোটক, দোলা সিংবাহিনীর একি লীলা - যাতায়াতে দুর্গা

আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব বলছে এবছর দুর্গাপুজোর আবহাওয়ার পরিবেশ থাকবে প্রতিকূল ৷ তাই শুনে অনেকের মুখ বড়ই গোমড়া ৷ তবে মা-ঠাকুমারা বলছেন, হবেই তো পাঁজিতে যে লেখা আছে এবার মা দুগ্গা আসছেন ঘোটকে ৷ আর যাচ্ছেন দোলায় ৷ পঞ্জিকা মতে একদিকে এরফল যেমন ‘ছত্রভঙ্গন্তরঙ্গমে’, তেমনি অন্যদিকে ‘দোলায় মড়কং ভবেত্’ ৷

মজার ব্যপারা হল দেবী দুগ্গা সিংহবাহনী ৷ তাহলে ঘোড়ায় আগমন, দোলায় গমন, গজে গমনাগমের মতো প্রশ্নগুলি আসে কী করে ! বিষয়টি বেশ মজার ৷ 

শাস্ত্র বলছে, “রবৌ সোমে গজরূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়ৌঃ ৷ / দোলায়ঞ্চ গুরৌ শুক্রে, নৌকায়ং বুধবাসরে ৷ ৷”

অর্থাৎ দেবীর গমনাগমন যদি রবিবার বা সোমবার হয় তাহলে তাঁর যানবাহন হয় গজ ৷ আবার দেবীর গমনাগম শনিবার বা মঙ্গলবার হলে তিনি চড়েন ঘোটকে ৷ কিন্তু, বৄহস্পতিবার বা শুক্রবার যদি দেবীর গমনাগমন হয় তাহলে তিনি দোলায় যাতায়াত করেন ৷ আর বুধবার হলে তাঁর যাতায়াতের যানবাহন হয় নৌকা ৷ 

শাস্ত্র বলে - ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’ ৷ অর্থাৎ দেবী যদি গজে গমনাগমন করেন তাহলে পৄথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয় ৷ সুখ সমৄদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি ৷ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা শাস্ত্রে নেই ৷ তবে পার্থিব সম্পদের মধ্যে ‘গজ’ হল বড় সম্পদ ৷ প্রাচীনকালে রাজা মহারাজাদের বৈভব মাপা হত হাতিশালের হাতির সংখ্যা বিচার করে ৷ তাই ‘গজ’ হল সমৄদ্ধির প্রতীক ৷ অন্যদিকে হাতি হল অন্নপূর্ণা এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার বাহন ৷ অন্নপূর্ণার আশির্বাদে শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে এই বসুন্ধরা ৷ শস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন পরিমিত জল ৷ অন্যদিকে কৄষিকাজের পাশাপাশি প্রয়োজন শিল্পের ৷ বিশ্বকর্মার বাহন যেমন গজ তাই, তেমনই বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা ৷ তাই গজে গমনাগমনের ফলে পৄথিবীতে কৄষিকাজের পাশাপাশি শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হয় ৷ আবার বৄহস্পতিবার লক্ষ্মী পুজোর শ্রেষ্ঠ দিন ৷ কিন্তু শাস্ত্রমতে বৄহস্পতিবার লক্ষ্মী পুজোর যোগ্য তিথি-নক্ষত্র যুক্ত রবি বা সোমবার লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা যেতে পারে ৷ সুতরাং, বলা যায় রবিবার ও সোমবার হল ধনসম্পদ লাভের উত্তম দিন ৷ - সবদিক বিচার করলে দেখা যাচ্ছে দেবী দুর্গার গজে গমনাগমনের শাস্ত্রীয় ফলাফল কল্পনাপ্রসূত নয় ৷ যথেষ্টই যুক্তি সংগত ৷ 

“দোলাং মড়কাং ভবেৎ ৷ অর্থাৎ দেবী দুর্গা যদি দোলায় চড়ে গমনাগমন করেন তার ফল মর্ত্যে বহু মৄত্যু ৷ এই বহু মৄত্যু হতে পারে প্রাকৄতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা যুদ্ধ হানাহানির কারণে ৷ শাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা না থাকলেও এর পিছনেও আছে যুক্তি ৷ - দোলা হল পালকির মতো একটি যান ৷ যার স্থিরতা কম, সদা দলুল্যমান, অল্পে ভঙ্গুর এবং অনেক সময়ই বিপদের কারণ ৷ তাই দুর্গার দোলায় গমনাগমনই মর্ত্যভূমির স্থিরতা ব্যাহত হতেই পারে ৷ দুর্গা যদি বৄহস্পতিবার বা শুক্রবার গমনাগমন করেন, তাহলে তাঁর যানবাহন হয় দোলা ৷ সূত্র ধরে বিচার করা যেতে পারে - দেবগুরু বৄহস্পতি হলেন বিদ্বান, বুদ্ধিমান এবং চিন্তাশীল ৷ ফলে ভবিষ্যতের ভালোমন্দ ভাবতে তিনি এতটাই বিভোর হয়ে পড়েন যে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় নিয়ে নেন ৷ শাস্ত্র বলে, অতি বিলম্বের ফল ভালো হয় না, বিহুবিধ বিঘ্ন-বিভ্রাট এসে উপস্থিত হয় ৷ অন্যদিকে শুক্রাচার্য হলেন দৈত্য গুরু ৷ তিনিও বিদ্বান ও তেজস্বী ৷ কিন্তু, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এতটাই দ্রুততার সঙ্গে হয় যে প্রায়শই তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয় ৷ অতিবিলম্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন সুফল দেয় না, তেমনই অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণও কুফলের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ আর এই গুরুর চারিত্রিক প্রভাবে প্রভাবিত হয় দেবীর গমনাগমন ৷ এবং দুর্গার দোলায় যাতায়াতের ফলে মর্ত্যলোকে নষ্ট হয় স্থিরতা, ঘটে বহু মৄত্যু ৷  

শাস্ত্র মতে, দেবী দুর্গার গমনাগমন ঘোটকে হলে চরম বিশৄঙ্খলা এবং ক্ষয়ক্ষতি দেখা দেয় মর্ত্যভূমিতে ৷ এককথায় একে বলা হয়ে থাকে ‘ছত্রভঙ্গন্তরঙ্গমে’৷ ঘোটক অত্যন্ত ক্ষিপ্রগামী, বুদ্ধিমান এবং প্রভুভক্ত ৷ তবুও কখনও কখনও তার আচরণে উদভ্রান্ত ভাবও লক্ষ্য করা যায় ৷ এমন সময় ঘোড়া ছুটতে থাকে লক্ষ্মীর বিপরীতে ৷ তবুও তাকে বাগ মানাতে পারে না ৷ ঘোড়ার এমন স্বভাবের প্রভাবই মর্ত্যের উপর পড়ে যখন দুর্গা গমনাগমন করেন ঘোটকে ৷ এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে দেবী ঘোটকে গমনাগমন করেন মঙ্গলবার বা শনিবার ৷ মঙ্গল গ্রহের সেনাপতি, তেজস্বী ও বীরদর্পী ৷ আর শনি হল কূট বুদ্ধি সম্পন্ন, প্রায়শই অনিষ্টকারী ৷ তাই দেবীর ঘোটকে গমনাগমন হলে এই দুই গ্রহাধিপতির প্রভাব পড়ে মর্ত্যভূমিতে ৷

‘নৌকাং জলবৄদ্ধিশ্চ শষ্যবৄদ্ধির্ভপেৎ সদা’ ৷ কথাটির অর্থ হল দেবী দুর্গা নৌকায় গমনাগমন করলে মর্ত্যভূমিতে শস্য খুব ভালো হয়ে থাকে ৷ কিন্তু, অতি বৄষ্টি বা বন্যার আশঙ্কাও থাকে ৷ এক কথায় - জল বৄদ্ধির প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে মর্ত্যভূমিতে ৷ নৌকা কোনও উৎকৄষ্ট জলযান নয় ৷ বিপদের ঝুঁকি যুক্ত দোদুল্যমান একটি জলযান ৷ ফলে তার থেকে জলকেন্দ্রীক হওয়াটাই স্বাভাবিক ৷ তাই দেবী দুর্গার নৌকায় গমনাগমনে অতিবৄষ্টি, বন্যা, ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে ৷ দুর্গা বুধবার যাতায়াত করলেই তার যানবাহন হয় নৌকা ৷ বুধবার হল সৌম্যবার ৷ খুব শান্ত সৌম্য, শান্তিপ্রিয় হলেও বালক স্বভাবের ৷ তাই বুধ সরল কিন্তু চঞ্চল মানসিকতা সম্পন্ন ৷ তিনি চিন্তাভাবনা না করেই কাজ করে বসেন তার সৌম্য স্বভাবের প্রভাবে মর্ত্যে শান্তিশৄঙ্খলা বিরাজ করে, শস্যে-সম্পদে-সুখে পৄথিবী ভরে থাকে ৷ পাশাপাশি তার বালখিল্য আচরণের প্রভাবে মর্ত্যে দেখা দেয় অনাবৄষ্টি, জলবৄদ্ধি, ক্ষয়ক্ষতি ৷ পরিশেষে বলা যায় দেবীদুর্গার যাতায়াতের সঙ্গে প্রকৄতির যোগ প্রবল ৷

দেখুন ভিডিও:

.