এখানে রইল ১০'টি তথ্য:
বুধবার দুপুরেই মহারাষ্ট্র উপকূলে প্রবল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এনডিআরএফ (জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী) -এর শীর্ষ কর্তা এসএন প্রধান, টুইটে লেখেন যে, মুম্বই থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আলিবাগের কাছে বুধবার দুপুরেই আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ। "পূর্বাভাস অনুযায়ীই মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় আলিবাগের কাছে ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ"। তিনি কয়েকটি ভিডিও ক্লিপও পোস্ট করেছিলেন যেখানে দেখা যাচ্ছিল প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গাছগুলো অসম্ভব রকম দুলছে।
ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার থেকে ১২০ কিলোমিটার, এর কারণেই ওই প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছে। ফুঁসতে দেখা গেছে সমুদ্রকেও। প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে কোথাও কোথাও। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, মহারাষ্ট্রের নিচু এলাকাগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সমুদ্রের জল।
মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের উপকূলবর্তী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪৩টি দল নামানো হয়েছে। প্রতিটি দলে রয়েছেন ৪৫ জন করে কর্মী। "উপকূল এলাকা থেকে সব মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া প্রায় সম্পূর্ণ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়েছে তাঁদের।তবে করোনা সতর্কতায় তাঁদের মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় জোর দেওয়া হয়েছে। সমস্ত প্রস্তুতিই যথাযথভাবে করা হয়েছে। আসুন আমরা প্রার্থনা করি, যাতে আমরা নিরাপদে এই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে পেরিয়ে রক্ষা পেতে পারি",বুধবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন এনডিআরএ কর্তা এসএন প্রধান ।
বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্ত করে বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের আধিকারিকরা। কাঁচা বাড়িতে বসবাস করা লোকজনদের খালি করাও রয়েছে তারমধ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফেও বলা হয়েছে, “মুম্বই শহরে বাস করা বস্তিবাসীদের, বিশেষ করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে”। কোনওরকম জরুরি অবস্থার জন্য, করোনার জন্য ব্যবহৃত নয়, এমন হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি মেটাতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে, পাশাপাশি পালঘরের নিউক্লিয়ার প্রকল্প নিয়েও পদক্ষেপ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফে বলা হয়েছে, “ধস, ভারি বৃষ্টি বা গাছ উপড়ে সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবিলায় দল তৈরি করা হয়েছে”। মহারাষ্ট্রের সচিবালয়ে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে এবং সারাক্ষণ সেটি খোলা থাকবে। সমন্বয় রাখতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা, নৌসেনা এহং আবহাওয়া দফতরকে। মুম্বইয়ে তিনটি এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা হয়েছে, দুটি পালঘর এবং রায়গড়, রত্নগিরি ও সিন্ধুদুর্গে একটি করে বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
গুজরাটের ভালসাড় এবং নবসারি জেলার ৪৭টি গ্রামের ২০,০০০ মানুষকে সরানো হয়েছে। ভালসাড় জেলাশাসক আরআর রাভালকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, “ইতিমধ্যেই আমরা আশ্রয়ের জন্য ঘর চিহ্নিত করেছি এবং ৩৫টি গ্রামের ১০,০০০ মানুষকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে”। প্রতিবেশি নবসারি জেলায় ১২টি গ্রামের ১০,২০০ লোককে সরানো শুরু হয়েছে।
মৎস্যজীবী ও পণ্যবাহী জাহাজগুলিকে বন্দরে ফেরার ব্যাপারে সতর্ক করা জন্য ভারতীয় উপকূল বাহিনী জাহাজ ও বিমানগুলি মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিওতে, মৎস্যজীবীদের বন্দরে ফেরার জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনীকে বলতে শোনা গিয়েছে। এক নাবিককে বলতে শোনা গিয়েছে, “এই এলাকায় ভারি বৃষ্টি ও খারাপ আবহওয়ার সতর্কতা। আপনাদের নৌকা ফিরিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বন্দরে নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে”।
মহারাষ্ট্রে ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। সেরাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৭০,০০০ জন এবং মৃতের সংখ্যা ২,৩৬২। ইতিমধ্যেই এই সংক্রমণ নিয়ে রীতিমতো চাপে রয়েছে হাসপাতালগুলি ও আইনশৃঙ্খলা বিভাগ।
দু সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে দেশে এটি দ্বিতীয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। গত মাসে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘুর্ণিঝ়ড় আমফান আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে, ফলে প্রায় ১০০ লোকের মৃত্যু হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। এ রাজ্যে ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আকাশপথে ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার জন্য ১,০০০ কোটি টাকা এবং ওড়িশার জন্য ৫০০ কোটি টাকা সাহায্য ঘোষণা করেন তিনি।