This Article is From Feb 19, 2019

টেলিফোন বুথের দিনকাল ও শ্যামল কাকা

১৯৯৬ সালের এক বিকেলবেলা। ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরছি বাবার সাইকেলে করে, দেখলাম বাড়ির সামনের রাস্তায় টাঙানো রয়েছে চাঁদোয়া। খান পঞ্চাশেক মানুষ রয়েছেন সেখানে। সকালে ইস্কুলে যাওয়ার সময় অমনটা দেখিনি। বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী হবে এখানে? বাবার তখন চল্লিশের কোঠায় বয়স। পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ছাতি। প্রায় তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে একটুও না হাঁফিয়েও আমাকে নামিয়ে দিয়ে আট-দশ বালতি জল তুলে আনতে পারে পাশের পাড়ার টিউবওয়েল থেকে। তবু, সেদিন যেন একটু হাঁফিয়েই গিয়েছে মনে হল। হাঁফ টানার যে তীব্র গরম শ্বাস, তার ভিতর থেকেই উত্তরটা দিয়ে দিল আমাকে। শ্যামলের দোকান। জেরক্স আর টেলিফোন বুথ…

পড়ুন এই লেখকের আগের ব্লগঃ https://www.ndtv.com/bengali/a-tale-of-a-melancholic-evening-on-the-bank-of-river-ganges-1945729 

আমাদের এই এলাকায় তখন টেলিফোনের থেকে পুকুরের সংখ্যা বেশি। থাউকো ধরে পুঁটি, খলসে বিক্রি হয়ে যেত কুড়ি-বাইশ টাকায়। একটু বেলার দিকে বাজারে গেলে আর চেনা মুখ হলে কেউ কেউ এমনিও দিয়ে দিত। পয়সা লাগত না। ভাবখানা এমন- তোমার থেকে আর কী পয়সা নেব বাবু! এমন একটি জায়গায় একটি টেলিফোন বুথ মানে তখন একটি আশার জন্ম। তার আগে খুব দরকার পড়লে আমাদের পাড়ারই একটি বাড়ি থেকে ফোন করতে হতো। ফোন এলেও আসত সেখানেই। তাদের বাড়ি থেকে ফোন করতে গেলে পুরোটা সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকত কেউ না কেউ। মিনিট দুয়েক কথা হয়ে গেলেই একটু কেশে দিত। বহুদূরে চাকরি সূত্রে চলে গিয়েছে স্বামী। তিনমাস আগের বিয়ে করা বউ শাশুড়ির সঙ্গে রয়েছে আমাদের পাড়ায়। বরের সঙ্গে সপ্তাহে একদিন কথা। অনেককিছু বলার আছে, তবু হয়ে উঠছে না। সারাক্ষণ মনে ভয়, কে শুনে নিল! ঠিক দু'মিনিট হলেই কে আবার কেশে দেবে! এসটিডি কল হলে এক মিনিট বাদেই কাশতে আরম্ভ করত। অথচ, ততদিনে মানুষ একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছিল, এইটুকু যন্ত্রটা কতটা এগিয়ে দিল আমাদের। একটা চিঠি পৌঁছতে সময় লাগে একমাস। তার উত্তর আসতে আরও একমাস। একটা ফোনে এক সেকেন্ডে পৌঁছে দেওয়া যায় আমার কথাগুলো। শুনে নেওয়া যায়, আমার কথাগুলো জানার পর উল্টোদিকের মানুষের বক্তব্য। ওই কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের মধ্যেই। একমাত্র সমস্যা ছিল, ওই কাশির শব্দ।

পড়ুন এই লেখকের আগের ব্লগঃ https://www.ndtv.com/bengali/blog-a-tale-of-a-fragile-father-and-his-dead-son-1943221

শ্যামল কাকার টেলিফোন বুথ হওয়ার পর তাও মুছে গেল। লোকে জানল, বুথের ভিতর ঢুকে কাচের দরজাটা বন্ধ করে দিলেই কেউ আমার কথা আর শুনতে পারবে না। আমার একেবারে একলা কাঁচা আম ঝরে পড়া দুপুরগুলোর মতো, বিকেলগুলোর মতো, আকাশের দিকে তাকিয়ে প্লেন দেখার মতো, কাচের গ্লাসে একটি ইটের টুকরো ফেলে দিলে আর্কিমিডিসের সূত্র মেনে তার জলতল কতটা উপরে উঠে আসে সেটি লক্ষ করার মতো, প্রাইভেট বাসের টিকিট জমিয়ে কোনও কোনও রাতে আপনমনে সেগুলোর ওপর হাত বোলাতে বোলাতে- ‘একদিন কন্ডাকটর হবোই' স্বপ্নটি দেখার মতো, সাইকেলের হাফ প্যাডেল করতে করতে করতে করতে আচমকা সিটে উঠে বসে ফুল প্যাডল করার আনন্দটির মতোই এইভাবে কথা বলার আনন্দটিও এবার থেকে ব্যক্তিগত। আমার এবং ব্যতিব্যস্ত করে তোলা ওই দমকা কাশির মাঝে অনিবার্য হাইফেন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করল ওই কাচের দরজা।

যার পোশাকি নাম- পিসিও বুথ। কাচের দরজার গায়ে লাল কালিতে মোটা করে লিখে দেওয়া রয়েছে- এসটিডি, আইএসডি, পিসিও। তখন কুইজে প্রশ্ন আসত এই তিনটের ফুল ফর্ম নিয়ে। পাড়ার অনেক মাতব্বর বিশেষ করে ‘এসটিডি'টা গুলিয়ে ফেলত খুব। এক ‘এসটিডি' বলতে গিয়ে আরেক ‘এসটিডি' নিয়ে বলে ফেলে নাজেহাল হয়ে বাজে হাল করে ফেলত নিজেদের। অমন একটি সময়েই আমাদের পাড়ায় এসেছিল শ্যামল কাকার ‘মা কালী জেরক্স অ্যান্ড টেলিফোন বুথ'। এই কথাটা ইংরেজিতে লেখা। নিচে বাংলায় ছোট করে সাধুভাষায় লিখে দেওয়া ( যেন উপরের কথাটা ইংরেজিতে লিখে গর্হিত অপরাধ করে ফেলেছে )- ‘এই স্থানে সুলভে দূরভাষ করা যাইবে'। এই লেখাটি দেখে আমাদের পাড়ারই এক বন্ধু একটি খুবই উচ্চমানের নিরীহ প্রশ্ন করেছিল সেই সময়- ‘ভাই, সুলভে তো পেচ্ছাপ করা যায় জানি। দূরভাষও করা যায়?'

সে যাক!

এক মিনিটে পিসিও বা লোকাল কল করতে লাগত ৫ টাকা। ওই একইসময়ে এসটিডি করতে লাগত ১০ টাকা। আইএসডি'টা নির্ভর করত কোন দেশ, তার ওপর। তখন প্রাইভেট বাসের এক পিঠের ন্যূনতম ভাড়া ছিল আড়াই টাকা। পাশের পাড়াতে একটা ফোন করতে গেলেও খরচ তার দ্বিগুণ। যদিও, তখন পাশের পাড়ায় কেউ ফোন করত না। সোজা চলে যেত।

শ্যামল কাকার ব্যবসা রমরম করে চলতে শুরু করল। ওর দুই মেয়ে। দুই মেয়ের নামই দুটো রঙের নামে। একজনের নাম সবুজ,  আরেকজনের নাম খয়েরি। দ্বিতীয় মেয়ে হওয়ার সময়ই বউ মারা যায়। কাকা আর বিয়ে করেনি। একটা ফোন করা তখন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের কাছে তীব্র বিলাসিতা। মধ্যবিত্তের কাছে যা বিলাসিতার বস্তু, তা চিরকালই অন্তত আমাদের মতো দেশে কোনও ব্যবসায়ীর কাছে বড় ‘অ্যাসেট'। অনেকে দূর থেকে দেখত। বুথে ঢুকতে সাহস পেত না। কারণ, টেলিফোন কীভাবে করতে হয়, তা তারা জানত না। কেউ কেউ ঢুকত বুথের ভিতর ছোট ফ্যানটির হাওয়া খাওয়ার লোভে। যেমন ছোট ফ্যান তখন মারুতি ভ্যান আর কোনও কোনও অ্যাম্বাসেডরের ভিতরেও থাকত। আমাদের মতো কেউ কেউ অদ্ভুতভাবে ওই বুথের ভিতর ঢুকে স্বাদ পেয়েছিল এক তীব্র নতুন আনন্দের। যে আনন্দ আসলে পাপের মতোই অমোঘ। তা হল, রং নম্বর। কচির এক মামা কী একটা চাকরি করত টেলিফোন অফিসে। সে ওকে একটা টেলিফোন ডাইরেক্টরি এনে দিয়েছিল। তখন ছ'ডিজিটের নম্বর। ঠিক হয়েছিল সপ্তাহে একদিন একজন বন্ধু দশ টাকা আনবে। যেদিন যে টাকা আনবে সে দু'মিনিট করে রং নম্বরে ফোন করে কথা বলবে। তবে কথা যেরকমই হোক না কেন, ফোন রাখতে হবে দু'মিনিটের মধ্যেই। কোনওভাবে যদি রং নম্বর বোঝার পরে অপরদিকের লোকটি আর কথা না বলে রেখে দেয়, তবে ওই দু'মিনিট সময়ের মধ্যেই আরেকটা ফোন করতে পারবে সে। আর সেই সময় পেরিয়ে গেলে তখন আমাদের খয়েরির শরণাপন্ন হতে হতো। খয়েরি আমাদের বন্ধু। ক্রিকেট খেলার সময় প্রচণ্ড জোরে বল করে। খুব ভালো ব্যাটসম্যানও ওর পরপর দুটো ওভার খেলতে চাপে পড়ে যেত। আমরা নাম দিয়েছিলাম, খয়েরি আক্রম। একবার বেপাড়ার সঙ্গে ম্যাচ খেলতে গেলাম। একটি ছেলে হঠাৎ বলল, আক্রম তো ফরসা, খয়েরি হবে কেন। আমরা প্রত্যেকেই বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়ে। ‘রেসিজম' মানে কী, কেউই জানতাম না তখন। টোন কাটা মানে কী, সেটাও যে খুব বুঝতাম, তাও নয়। তবু, ওই ছেলেটিকে আমরা সবাই মিলে মারধর করেছিলাম সেদিন। পরে খয়েরি আমাদের বলেছিল, মারলি কেন? ও তো ইয়ার্কিই করেছিল একটু… যাক গে, ঘটনা হল, তখন প্রায় কেউই অত তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিত না। মানুষ কথা বলতে চাইত সম্পূর্ণ অচেনা ও নতুন এক মানুষের সঙ্গে। রং নম্বর বুঝেও। আমরাও বলতাম। একবার তমাল ১০ টাকা আনতে পারল না। ওর বাবা একটি ফ্যানের কারখানায় কাজ করত। কারখানা বন্ধ হয়ে গেল আচমকা। সকলে মিলে সেদিন নিজের ভাগের থেকে তমালকে দেওয়া হল। কারণ, ও তো বন্ধু। বুথে ঢুকে ফোন করতে গিয়ে রিসিভারটায় ফোনের কভারটা জড়িয়ে নিয়ে (কারণ, আমরা তখন প্রত্যেকেই হিন্দি সিনেমা দেখে জেনে গিয়েছিলাম, ফোনে নিজের আওয়াজ গোপন ও গম্ভীর রাখতে গেলে ওটাই সেরা উপায় ) বেশিরভাগেরই ছিল এক ডায়লগ- ‘হ্যালো, আমি অমুক থানা থেকে বলছি'! কেউ কেউ একটু অন্যরকম করতে যেত। কিন্তু, আমি অন্যরকম কিছু করলে তার জবাবে অপরদিকের লোকটি যদি অন্যরকম কিছু বলে, তাহলে তার কী জবাব দেব, সেই উত্তর প্রায় কারও কাছেই ছিল না। বাবু একবার ফোন করে স্মার্টলি বলল- ‘রিস্তে ম্যায় তো হাম তুমহারে বাপ লাগতে হ্যায়, নাম হ্যায় শাহেনশা'! পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ওর মুখ কাঁচুমাঁচু হয়ে গেল! কী ব্যাপার? না, উল্টোদিকের লোকটি ওর কথার জবাবে ওকে সটান ‘দিওয়ার'-এর ডায়লগ বলে দিয়েছে। ‘তুম লোগ মুঝে ঢুন্ড রাহে হো, অওর ম্যায় তুমহারা ইয়াহাঁ ইন্তেজার কর রাহা হুঁ'!

এরপর আর কি কিছু বলার থাকে নাকি?!

এমনই একবার একটি ফোন করেছিলাম আমি। ওই একইভাবে ফোনে তোয়ালের কভার জড়িয়ে। ‘হ্যালো, আমি অমুক থানা থেকে বলছি'। অপরদিক খানিকক্ষণ চুপচাপ। কয়েক মুহূর্ত। তারপর থেমে থেমে এক বয়স্ক মহিলা বললেন- কী নাম তোমার বাবা? আমি স্বাভাবিকভাবেই হতবাক। তখনও জানি না, ‘নিজত্ব' ব্যাপারটা এমনই, তা বেশিরভাগ সময়েই আসলে নিজের মতোই বাইরের পৃথিবীটার কাছ থেকেও লুকিয়ে রাখা যায় না। সেদিন ওই মহিলা ফোন রাখার সময় বলেছিলেন, আমাকে মাঝেমাঝে ফোন করবে বাবা? কথা বলতে খুব ভালোলাগে…

আমরা যখন এইসব করছি, তার পাশ দিয়েই শ্যামল কাকার  বাড়ির টিনের চাল উঠে গিয়ে ছাদ ঢালাই হল। আমরা সবাই মিলে সেদিন চেয়ে চেয়ে লুচি তরকারি খেলাম।

বুথ আর জেরক্সের দোকানটির সঙ্গেই বড় হতে থাকলাম আমরা। ততদিনে পাড়ায় আমাদের মতোই কারও কারও বাড়িতে ফোন এসে গিয়েছে। যাদের যাদের আসেনি, তারা তখনও বিকেলবেলায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে রং নম্বরে একটা ফোন করবে বলে দাঁড়াত। ওই বুথ থেকেই মাঝেমাঝে একটি মেয়ে ফোন করতে আসত। তাকে আবার ছোটনের খুব পছন্দ হল। ছোটন আমাদের থেকে একটু বড়। মেয়েটি কাকে ফোন করত আমরা জানি না। তবে, যে মিনিট দশেক বুথ থেকে কথা বলত ও। সেই সময়টা ছোটন লক্ষ করে যেত ওকে। সিনেমার নায়কেরা যেমন নায়িকাদের দেখে করে, ঠিক তেমনভাবেই মেয়েটিকে দেখতে সহজ ক্যাচ বা রান আউট মিস করে ফেলত ছোটনও। তখনও প্রেমে একটু কাজল এবং একটু ‘তোমার' বা ‘শুধুই তোমার' ধরনের লেখাগুলো মিশে ছিল। তাই আমরা বললাম, একটা চিঠি লিখে দে না। ছোটন গম্ভীর মুখ করে বলল, না, চিঠি নয়। বাবা বলেছে, কয়েকদিন বাদেই বাড়িতে ফোন নিয়ে আসবে। ওকে আমি ফোনই করব…

বুথের ভবিষ্যতের সাফল্য নিয়ে আমাদের কারও মনেই কোনও সংশয় ছিল না তখনও। তবু, তা ঘটেনি। সকলের বাড়িতেই ফোন চলে এল একসময়। তাও তখন এসটিডি বা আইএসডি করার জন্য কারও কারও প্রয়োজন পড়ত টেলিফোন বুথে যাওয়ার। কয়েকবছর বাদে সকলের হাতেই চলে এল মোবাইল। তারপর হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, স্কাইপ...কেউই আর দূরে নয়। কেউই আর অধরা নয়।

সবুজ দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল অনেকদিন। পরপর দু'খানা বাচ্চা হতে গিয়েও নষ্ট হয়ে যায়। বাবার কাছে আর আসে না। পিসিও থেকে ফোন করার পয়সা কমে গিয়ে হয়ে গেল মিনিটে এক টাকা। খুব দায়ে না পড়লে কেউ আর যায় না। শ্যামল কাকার সংসার যেটুকু চলার চলে জেরক্স থেকে আর খয়েরির বাংলা আর ইতিহাসের টিউশন থেকে। আমরা যখন সবে কলেজ যাওয়া শুরু করেছি, সেই সময় আমাদের পাড়ার প্রথম ফোন ব্যবসায়ী শ্যামলকান্তি মজুমদার একটি স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে দোকানের সামনে বসে থাকত। আমাদের দেখে মাঝেমাঝে ডাকত, একটা রং নম্বর করে যা না!

বছর তিনেক আগে প্যাংক্রিয়াসের ক্যানসারে মারা যায় শ্যামল কাকা। দোকানটা উঠে গিয়েছিল তার আগের বছরই। কারণ, কেউ আর ফোন করতে আসে না। আজ থেকে বাইশ-তেইশ বছর আগের এক বিকেলবেলা যেমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার বাবা বলেছিল, ঠিক তেমনই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বছর চার-পাঁচ আগে বলেছিল, শ্যামলটার মাথা-টাথা বোধহয় পুরো গেছে! জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন? বাবা বলল, ওর পাশের মিষ্টির দোকানের নতুন ছেলেটা বলছিল আমাকে। সারাক্ষণ ওই নোংরা বুথে বসে থাকে। আর ফোন টেপে। কেউ কিছু বললে বলে রং নম্বরে ফোন করছি। অথচ, ওর ফোনের লাইন দেড় বছর আগে কেটে দিয়েছে…

কোথায় আছে এখন শ্যামল কাকা? কোথায় আছে সেই মেয়েটি, যাকে ছোটন ফোন করবে বলেছিল? কোথায় আছে সেই বৃদ্ধা? যাকে আর কখনওই আমার ফোন করা হল না? এখনও একটি ফোন আসবে বলে রিসিভারের সামনেটায় বসে আছে কি? কখনও ফোনটি আসার অপেক্ষা করেছিল কি সে? যে জায়গাটায় শ্যামল কাকার দোকানটা ছিল, তার উল্টোদিকের রাস্তাটি এখন দারুণ ঝকমকে। সেই ঝকমকে রাস্তায় সন্ধেবেলা দাঁড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপে এক বন্ধুর পাঠানো বরফে ঢাকা পোল্যান্ডের রাস্তার ধারের নিঃসঙ্গ বুথটির ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি সিগারেট টানি। বুঝতে পারি, সিগারেটের ধোঁয়াটি হাওয়ায় দোল খেতে খেতে নিজের মতোই বাঁক নিয়ে ‘১৯৯৬ সাল' নামের কোন এক তারার দিকে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে।  

.