আইনের ছাত্র ছিলেন জেটলি, পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম নেতা এবং নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
দেশের সবচেয়ে বড় কর সংস্কার করা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির (Arun Jaitley) প্রয়াণ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। AIIMS এর তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার দুপুর ১২.০৭ এ মৃত্যু হয় অরুণ জেটলির। ৯ অগস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, এবং একাধিক বিভাগের চিকিৎসক, তাঁর দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। নরেন্দ্র মোদি প্রথম জমানায়, ক্রাইসিস ম্যানেজার ছিলেন অরুণ জেটলি (Arun Jaitley)। স্বাস্থ্যজনিত কারণে, দ্বিতীয়বার মন্ত্রিসভায় আসেননি তিনি। ২০১৮-এ তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন হয় এবং নিয়মিত শারিরীক পরীক্ষা চলছিল তাঁর।
আইনের ছাত্র ছিলেন জেটলি, পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম নেতা এবং নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০১৪-এ যখন দেশের অর্থনীতি ধুঁকছিল, ঋণের খরচ বাড়ছিল এবং সংস্কারের অভাবে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন, সেই সময় অর্থনমন্ত্রকের দায়িত্বে আসেন অরুণ জেটলি। তেলের দাম ছিল পড়তির মুখে, সেই সময় বাজেট ঘাটতি মেটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন জেটলি (Arun Jaitley) এবং সুদের হার কমাতে সেই সময়ের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর রঘুরাম রাজনকে রাজি করিয়েছিলেন, সুদের হার কমাতে।
Track Record
অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে থাকাকালীন, অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেন তিনি। দেশজুড়ে অভিন্ন কর পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থা চালু করেন তিনি, এবং ঋণের বোঝায় ধুঁকতে থাকা ব্যঙ্কগুলির হাল ফেরাতে দেউলিয়া আইন পাশ করান।
ব্যাঙ্কিং সেক্টরের সবচেয়ে কঠিন সময়ে অর্থমন্ত্রকের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি (Arun Jaitley)। সেই সময় জালিয়াতি এবং ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০১৬-এ নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলের ঘোষণার সময়েও তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে। এই নোট বাতিলের ফলে বহু ব্যবসা সমস্যার মুখে পড়ে, কাজ হারা হন অনেকে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ধাক্কা খায়।
তাঁর জায়গায় দ্বিতীয়বারে অর্থমন্ত্রী হন নির্মলা সীতারামন, যে চেয়ারে তিনি বসতেন, সেখানে বসতে কুন্ঠা বোধ করেন সীতারামন।
Key Strategist
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয়ের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সেই সময় অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসেন অরুণ জেটলি। গুজরাটে ভোট দেখাশোনার সঙ্গে সঙ্গেই নরেন্দ্র মোদির কৌশলরচনাকারী বা ক্রাইসিস ম্যানেজারদের মধ্যে অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০০২ গুজরাটে মুসলিম বিরোধী হিংসার ঘটনা সামাল দিতে না পারায় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠলে অবতীর্ণ হন অরুণ জেটলি (Arun Jaitley)।
এমমনকী,শারীরিক কারণে, মন্ত্রিসভায় থাকতে না পারলেও, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের নানা পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহারের ঘটনাকে সমর্থন জানান তিনি এবং “ইতিহাসে জায়গা” পাবে বলে মন্তব্য করেন।
১৯৪৭ এ দেশভাগের সময় পাকিস্তান থেকে এদেশে চলে আসেন অরুণ জেটলির পরিবার। পরে দিল্লি থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ছাত্রনেতা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ছাত্রসংসদের নেতা ছিলেন জেটলি।
১৯৭৫-১৯৭৭, পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধির কংগ্রেস জরুরি অবস্থা জারি করলে, বন্দি ছিলেন অরুণ জেটলি। তিনবছর পর, আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন।
High-Profile Lawyer
আইনজীবী হিসেবে, পেপসিকো, কোকা কোলার মতো সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন অরুণ জেটলি। বিড়লা পরিবারেও কাজ করেছেন তিনি।
১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের একাধিক দায়িত্বে ছিলেন অরুণ জেটলি (Arun Jaitley), সামলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রকের দায়িত্বও। ২০০৩ এ World Trade Organization এ ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন জেটলি।
সুস্বাদু খাবারের দিকে ঝোঁক ছিল অরুণ জেটলির, ২০১৪ অর্থমন্ত্রী হওয়ার সময়েই ওয়েট লস সার্জারি হয় তাঁর। চিনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং-এর সৌজন্যে নরেন্দ্র মোদির দেওয়া নৈশভোজের পরেই সংক্রমণ হয় তাঁর, ফলে অস্ত্রপচার করতে হয় তাঁর।
মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর, নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে জানান, ১৮ মাস ধরে শারিরীক অবস্থার কারণে, সরকারের অংশ নিতে পারবেন না তিনি (Arun Jaitley)।