This Article is From Aug 03, 2019

‘অপু’ অর্জুন-এর যাত্রা শুরু সেপ্টেম্বরে, ‘অভিযাত্রিক’-এ থাকবে অনুষ্কা শংকরের সেতার?

৬০ বছর পরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপু বা অপূর্ব কুমার রায় কতটা মনে সাবালক? তার ভবঘুরে মনটা কি আজও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়? ছেলে কাজল কি বাবার খুব ভালো বন্ধু?

‘অপু’ অর্জুন-এর যাত্রা শুরু সেপ্টেম্বরে, ‘অভিযাত্রিক’-এ থাকবে অনুষ্কা শংকরের সেতার?

একুশের 'অপু' অর্জুন চক্রবর্তী

কলকাতা:

৬০ বছর পরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপু বা অপূর্ব কুমার রায় কতটা মনে সাবালক? তার ভবঘুরে মনটা কি আজও তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়? ছেলে কাজল কি বাবার খুব ভালো বন্ধু? আগামীকাল ‘বন্ধুত্ব দিবস'। তার আগে বাবা-ছেলের বন্ধুত্বের নয়া সমীকরণের গল্প শোনাচ্ছে পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের (Subharajit Mitra) আগামী ছবি ‘অভিযাত্রিক‘ (Avijatrik)। যেখানে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করবেন অর্জুন চক্রবর্তী (Arjun Chakrabarty)।এবং সম্ভবত শোনা যাবে পণ্ডিত রবিশংকর কন্যা অনুষ্কা শংকরের (Anushka Shankar) সেতারের ঝঙ্কার। খবরে উপালি মুখোপাধ্যায়

শুধুই ছবি বানাতে পারি, তাই ‘গোত্র'ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা: নন্দিতা রায়

৬০ বছর পরে আবার ফিরছে নিশ্চিন্দিপুরের অপু। বড়পর্দায়, পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের সৌজন্যে। সত্যজিৎ রায় তাঁর অপু ট্রিলজির শেষ ভাগ 'অপুর সংসার'-এ অপুর সঙ্গে ছেলের বন্ডিংয়ের ঝলক দেখিয়ে ছবি শেষ করেছিলেন। সেই ছবি বাঙালির মনে 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ' গোছের অনুভূতি রেখে দিয়েছিল। এতগুলো বছর ধরে সিনেপ্রেমীরা যথবার ছবিটিকে দেখেছেন, সম্ভবত এই প্রশ্নই তাঁদের মনে ঘোরাফেরা করেছে, বিশ্ব ভবঘুরে অপুর মনে কাজলের জায়গা কতটা? কাজল কীভাবে অপুর কোলেপিঠে চড়ে বড় হল? কেমন হয়েছে সে?

rihaet38

এই কৌতূহল কি পরিচালকেরও ছিল? যে উপন্যাস বিশ্বের দরবারে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এনে দিয়েছে তাকে নতুন করে পর্দায় দেখানোর লোভ সামলাতে পারলেন না কেন? এই দুটি প্রশ্ন শুভ্রজিৎকে করতেই খুব সোজাসাপটা ভাবেই তিনি জানালেন, সত্যজিৎ রায়কে ছোঁয়া বা অতিক্রমের কোনও স্পর্ধা বা ইচ্ছেই আমার নেই। আমি শুরু করছি ঔপন্যাসিকের অপু ট্রিলজির শেষ ১৫০-২০০ পাতা নিয়ে। সেই অংশ আজও কেউ ছোঁয়নি। যেখানে আস্তে আস্তে কাজল বড় হবে বাবার কাছে থেকে। একসময় বাবা-ছেলে হয়ে উঠবে খুব ভালো বন্ধু। কারণ, অপু আর কাজল যে একে অন্যের পরিপূরক। কারণ, আপন বলতে তাদের যে আর কেউ নেই। কাজলকে সঙ্গে নিয়ে অপু আবার ফিরে যাবে বারাণসীতে। নিশ্চিন্দিপুরে। ফেলে আসা ছোটবেলা দেখতে। একইসঙ্গে অপু তার চরৈবেতি মন্ত্র ছড়িয়ে দেবে কাজলের মনেও। ১৯৪০ সালের কলকাতা, নিশ্চিন্দিপুর নতুন করে গড়ে নেব আমরা। লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক স্তরে এই ছবিকে পৌঁছে দেওয়া। শুটিং শুরু হবে সেপ্টেম্বরে।

ডাবিং শেষ ‘গুমনামি বাবা'-র: খুশির মেজাজে পরিচালক সৃজিত

এটা যদি ছবি সম্বন্ধে আগ্রহ বাড়ানোর প্রথম ধাপ হয় তাহলে পরের ধাপটি আরও জোরালো। এই ছবির প্রযোজনায় প্রয়াত পরিচালক তপন সিংহের প্রযোজনা সংস্থা গৌরাঙ্গ ফিল্মস। যার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক পরিচালকের। তপনবাবুর ছবি হারমোনিয়াম, সফেদ হাতি, আজ কা রবিনহুডস আনোখা মোতি ছাড়াও সংস্থাটি ১৯৭৬ সাল থেকে একাধিক ভারতীয় ভাষায় ছবি প্রযোজনা করে এসেছে। অভিযাত্রিক নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ আগ্রহী সংস্থার কর্ণধার গৌরাঙ্গ জালান। কথায় কথায় জানিয়েছেন, এমন একটা ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। বাবা-ছেলের সম্পর্কে নিয়ে ছবি খুব কম হয়েছে বাংলায়। সেই সম্পর্ক যখন উঠএ আসে উপন্যাসের পাতা থেকে তখন তা যে আরও আলাদা মাত্রা যোগ  করে সেটা বলাই বাহুল্য। পাশাাপাশি, এই ছবির সহ-প্রযোজক হিসেবে যুক্ত থাকছেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক মধু ভাণ্ডারকর।

ti1rd998

জানুয়ারি মাসে ছবির টিজার পোস্টার সামনে আসার পরেই এক অদ্ভুত নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলা ছবির দুনিয়া এবং দর্শক। কারণ, ছবিতে অপুর মুঠোবন্দি কাজলের হাত ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সাদা-কালো পথের পাঁচালির যুগে। এই শিল্পবোধকেও কিন্তু ছবির মুকুটে  অনন্য পালক হিসেবে জোড়া যেতে পারে স্বাভাবিক ভাবেই।

এবার তৃতীয় ধাপ। ছবির অন্যান্য অভিনেতা ঠিক হয়ে গেলেও অপু কে হবেন, এই নিয়ে বিস্তর খোঁজ চালিয়েছেন পরিচালক এবং প্রযোজক সংস্থা উভয়েই। সদ্য জানানো হয়েছে সেই মুখ্য চরিত্রাভিনেতার নাম। অর্জুন চক্রবর্তী হচ্ছেন অপু তথা অপূর্ব কুমার রায়। যাঁর বিষ্ময় মাখানো দুই চোখ আর পরিণত বয়সেও সারল্য মাখানো মুখ টেনেছে শুভ্রজিৎকে। কাজলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ৮২ জন বাচ্চাকে দেখার পর ৮৩ নম্বরে থাকা আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হয়েছে কাজলের ভূমিকায়। 'অভিযাত্রিক'কের যাত্রাপথ আরও সুগম করতে ছবিতে থাকছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, দ্বিতিপ্রিয়া রায়, রূপাঞ্জনা মিত্র, তনুশ্রীশংকর, সোহাগ সেন, বরুণ চন্দ, বিশ্বনাথ বসু, সোহাগ সেন। শুভ্রজিৎ জানিয়েছেন, সব্যসাচী চক্রবর্তীকে দেখা যাবে বিশ্বপরিব্রাজকের ভূমিকায়। এই চরিত্র উপন্যাসেও ছিল। যাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে অপুর। এভাবেই অফস্ক্রিন বাবা-ছেলের রসায়ন ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেছি। গত তিন-চার মাস ধরে বাচাচদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করাচ্ছেন 'হামি' খ্যাত সঙ্গীতা চক্রবর্তী। যিনি পেশায় সাউথ পয়েন্টের শিক্ষিকা। এছাড়া, ফ্লোরে বাকিটা দেখাশোনা করবেন সোহাগ সেন। সঙ্গীতে বিক্রম ঘোষ। পোশাক পরিকল্পনায় অগ্নিমিত্রা পাল। 

‘মৃদু ধমকে মহানায়ক বলেছিলেন, যা সহ্য হয় না তা খাওয়া কেন!' লিলি চক্রবর্তী

বারাণসী, উত্তরবঙ্গের গরুবাথান জঙ্গলে শুট ছাড়াও সেটে নতুন করে তৈরি করা হবে চারের দশকের কলকাতা এবং নিশ্চিন্দিপুরকে। এবং লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট,  সব ঠিক থাকলে ছবিতে সেতারের মূর্চ্ছনা শোনা যেতে পারে পণ্ডিত রবিশংকর কন্যা অনুষ্কা শংকরের। পরিচালকের তরফ থেকে এই বিশেষ অনুরোধ জানানো হলেও অসুস্থতার কারণে সেই ডাকে এখনও সাড়া দিয়ে উঠতে পারেননি অনুষ্কা। যদিও শুভ্রজিতের আশা, ইতিবাচকই কিছু ঘটতে চলেছে। এবং সেটাই যদি হয় তাহলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে শুভ্রজিতের হাত ধরে। অপুর গল্পে বাবার মতোই মেয়ের সেতারের ঝঙ্কার ব্যবহার করে। সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজির নেপথ্যেও যে ছিল পণ্ডিতজির সেতার...।

.