শিল্পী রাম ভি সুতার ঐক্যের মূর্তি (Statue of Unity) নকশা গড়েছেন
নিউ দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ঐক্যের মূর্তি' (Statue Of Unity) উন্মোচন করলেন আজ । সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের (Sardar Ballavbhai Patel) এই মূর্তি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু। নর্মদা নদীর কাছাকাছি সর্দার সরোবর বাঁধের (Sardar Sarovar Dam) কাছে স্থাপিত হয়েছে এই বিশাল মূর্তিটি। কিন্তু এই বিশাল শিল্পের নৈপুণ্যের পিছনে কারিগর কে জানেন? রাম ভি সুতার (Ram V. Sutar)। পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত 92 বছর বয়সী এই কারিগর তৈরি করেছেন এই মূর্তিটি। এর আগেও শত শত মূর্তি তৈরি করেছেন রাম। সংসদ ভবনে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিটিও তাঁরই তৈরি।
এখানে রইল শিল্পী রাম ভি সুতার সম্পর্কিত বিশেষ কিছু তথ্য:
রাম ভি সুতার মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামের (গোন্টুর) বাসিন্দা। তাঁর পিতা ছিলেন একজন কাঠের শিল্পী। গ্রামের স্কুলেই প্রারম্ভিক শিক্ষার পর গুরু রাম কৃষ্ণ জোশীর কাছে প্রতিমা গড়ার কাজ শেখেন।
এরপর, রাম জেজে স্কুল অব আর্টে ভর্তি হয়েছিলেন। কারিগরির জন্য বিখ্যাত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তিনি নতুন সমস্ত কৌশল শেখেন। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি কয়েক দিনের জন্যও চাকরিও করেন। পরে 1958 সালে দিল্লিতে চলে এসেছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে লক্ষ্মীনগরে কয়েকদিন বসবাস করার পর নয়ডাতে নিজস্ব স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।
যে সময় তিনি দিল্লিতে আসেন তখন ইন্ডিয়া গেটের নীচে কিং জর্জ (পঞ্চম) এর মূর্তি বিষয়ে একটি বিবাদ চলছিল এবং মূর্তিটি সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি বসানোর কথা হয়। রাম তার জন্য একটি গান্ধী মূর্তি তৈরিও করেন।
তবে পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, ওই ক্যানোপিতে মহাত্মার ধ্যানরত মুদ্রায় একটি মূর্তি স্থাপিত হবে এবং এই মূর্তি নির্মাণের জন্য একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায়, রাম ভি সুতারই জয়ী হন। যদিও সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
মহাত্মা গান্ধীর থেকেই অনুপ্রাণিত রাম। সংসদ ভবন চত্বরে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর 17 ফুট উঁচু মূর্তিটিও তিনিই তৈরি করেন। পাশাপাশি, পাটনার গান্ধী ময়দানে, কর্ণাটক বিধানসভায় থাকা গান্ধী মূর্তিও তাঁরই তৈরি। 300 টিরও বেশি দেশে তাঁর নির্মিত গান্ধী মূর্তি রয়েছে।
রাম ভি সুতারের তত্ত্বাবধানে, চীনে এই মূর্তিটির ঢালাই করা হয়েছে। এবং এক একটি গুজরাটে আনা হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে মূর্তিটির স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী 31 অক্টোবর মূর্তি উন্মোচন করবেন।
রাম ভি সুতারের মতে, চারটি ধাতুকে এই মূর্তি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তামার সঙ্গে জিংক, সীসা এবং টিন দিয়ে তোরি এই মূর্তি হাজার হাজার বছরেও নষ্ট হবে না ধুলো, সূর্যালোক, বৃষ্টির কোনও প্রভাব থাকবে না, জংও ধরবে না।
‘ঐক্যের মূর্তি'র মোট ওজন 1700 টন এবং উচ্চতা 522 ফুট বা 18২ মিটার। মূর্তির পায়ের উচ্চতা 80 ফুট, হাতের উচ্চতা 70 ফুট, কাঁধের উচ্চতা 140 ফুট এবং মুখের উচ্চতা 70 ফুট।
রাম ভি সুতার বর্তমানে মুম্বাইয়ের সমুদ্রে স্থাপিত হতে চলা শিবাজীর মূর্তির নকশা প্রস্তুত করছেন। মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে যে, শিবাজীর মূর্তিটি ‘ঐক্যের মূর্তি'কেও ছাপিয়ে যাবে এবং বিশ্বের সব থেকে উঁচু মূর্তি হবে। গত বছর, অমৃতসরের যুদ্ধ মেমোরিয়ালে স্থাপিত হওয়া বিশ্বের সব থেকে বড় তরোয়ালটিও নির্মাণ করেছিলেন তিনিই।
2016 সালে সরকার কর্তৃক পদ্ম ভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় রাম ভি সুতারকে। এর আগে তিনি 1999 সালে পদ্মশ্রী সম্মানও পেয়েছিলেন। এছাড়াও, বোম্বে আর্ট সোসাইটির তরফে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কারেও সম্মানিত করা হয় তাঁকে।