This Article is From Oct 15, 2019

জানেন, জুতো নিয়ে কোন গবেষণা করে দারিদ্রের আশ্চর্য সত্য জেনেছিলেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ!

কেন আফ্রিকার একটি দেশে পড়ুয়ারারা স্কুলে যাচ্ছিলেন না তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তত্ত্বের বদলে অভিজিৎ এবং তার দল একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায় যে, খালি পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হত বলে শিশুদের মধ্যে হুপিং কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়

জানেন, জুতো নিয়ে কোন গবেষণা করে দারিদ্রের আশ্চর্য সত্য জেনেছিলেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ!

অনুন্নয়নের কারণের পিছনে কোনও মহৎ তত্ত্ব থাকতে পারে না এমনটাই বিশ্বাস করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার ডাফ্লো

কলকাতা:

অনুন্নয়নের কারণের পিছনে কোনও মহৎ তত্ত্ব থাকতে পারে না এমনটাই বিশ্বাস করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার ডাফ্লো। তাই তত্ত্ব কথা থেকে বেরিয়ে মাইক্রো স্তরের ক্ষেত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার (micro-level field experiments) কাজেই আস্থা ছিল তাঁদের। আর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই খালি পায়ে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া আর হুপিং কাশি এবং আফ্রিকার বাচ্চাদের স্কুলছুট হওয়ার মধ্যে অদ্ভুত যোগসূত্র প্রমাণ করতে সফল হয়েছিলেন তাঁরা। ভারতীয়-আমেরিকান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এস্থার ডাফ্লো এবং মাইকেল ক্রেমার যৌথভাবে ‘বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির জন্য' সোমবার ২০১৯ সালের নোবেল অর্থনীতি পুরস্কার অর্জন করেছেন।

ভোরের ফোনে নোবেল জিতেছেন শুনে ঘুমোতে চলে যান অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়!

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর গবেষণামূলক পদ্ধতিতে এবং ব্যক্তিগত জীবনে ‘মাটির মানুষ' বলেই মনে করেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিরূপ সরকার (Indian Statistical Institute professor Abhirup Sarkar)। কীভাবে ইতিহাসের গভীরে গিয়ে কঠোর অভিজ্ঞতামূলক কাজের মধ্য দিয়ে বাংলার জমিদারি ব্যবস্থার (zamindari system of Bengal) ফলে রাজ্যের কী অবস্থা হয়েছে সে কারণ চিহ্নিত করেছিলেন অভিজিৎ তা ব্যাখ্যা করেন অভিরূপ। ব্রিটিশ ভারতে রায়তওয়ারি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ( ryotwari land revenue system) ছিল মহারাষ্ট্রে, আর বঙ্গে ছিল জমিদারি ব্যবস্থা। এর ফলে কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণে পিছিয়ে পড়ে বাংলা, সেই সমস্যা এখনও বর্তমান। অভিরূপ বলেন, “রায়তওয়ারি ইন্সেন্টিভ চালিত বিষয়। আমি যদি আরও বেশি উত্পাদন করি তবে অতিরিক্ত উত্পাদনের একটি অংশ আমার কাছে আসবে। কিন্তু জমিদারি পদ্ধতিতে কৃষক বেশি উত্পাদন করলে বাড়তি উত্পাদন জমিদারের কাছেই যাবে। সুতরাং জমিদারি পদ্ধতিতে কৃষকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনে কোনও ইন্সেন্টিভ নেই।”

অভিরূপ সরকার আইএএনএসকে বলেন, “ইতিহাস এই অর্থে অব্যাহত হয়েছে যে জমিদারি এবং রায়তওয়ারি উভয় ব্যবস্থা দীর্ঘকাল আগে মুছে যাওয়া সত্ত্বেও একই মানসিকতা রয়েছে।" “এই পদ্ধতিটি অর্থাৎ র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়ালে তিনি ছোট আকারের নমুনা নিয়ে অসংখ্য ব্যবহারিক মাইক্রো-লেভেল ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন,” বলেন অভিরূপ।

সাউথ পয়েন্টের মুখচোরা ফুটবলপ্রেমী অভিজিৎই নোবেলজয়ী! কী বলছেন তাঁর শিক্ষকেরা?

অভিরূপ আরও বলেন, উন্নয়ন অর্থনীতিতে, মানুষ কেন দরিদ্র তা নিয়ে প্রচুর তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করতে পারে যে দারিদ্র রয়েছে কারণ সেখানে কোন প্রতিষ্ঠান বা মার্কার নেই, বা সরকার কাজ করছে না বলে। “তবে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এগুলি সমস্তই গ্র্যান্ড থিওরি। তিনি বিশ্বাস করেন যে এমন কোন মহৎ তত্ত্ব থাকতেই পারে না যা অনুন্নয়নকে ব্যাখ্যা করতে পারে। তার অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মাইক্রো সমস্যাগুলির মাইক্রো-সমাধান রয়েছে, প্রসঙ্গ ভিত্তিক সমাধান, সমস্যা ভিত্তিক সমাধান রয়েছে,” তিনি বলেন।

অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত (Economist Dipankar Dasgupta) বলেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সহযোগীরা অর্থনৈতিক গবেষণায় র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল পদ্ধতির পথিকৃৎ। এই পদ্ধতিটি আগে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হত।  দীপঙ্কর জানান, কেন আফ্রিকার একটি দেশে পড়ুয়ারারা স্কুলে যাচ্ছিলেন না তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তত্ত্বের বদলে অভিজিৎ এবং তার দল একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায় যে, খালি পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হত বলে শিশুদের মধ্যে হুপিং কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষকরা শিশুদের দুটি দল গঠন করেছিলেন। একটি দলকে জুতো দেওয়া হয়েছিল, অন্য দলটি খালি পায়েই স্কুলে যেত। দেখা গিয়েছে যে, জুতো পরা শিশুদের হুপিং কাশি হয়নি, তাঁরা আরও স্বাস্থ্যবান হয়েছে এবং স্কুলে পড়াশোনা করতেও গিয়েছে।

দীপঙ্কর আরও বলেন, “এটি একটি উদাহরণ যেখানে কোনও তত্ত্বের প্রয়োজন হয় না এবং সমাধানটিও খুব সহজ। সেখানে কোনও অপ্রয়োজনীয় মহিমা নেই।" দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশিরভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষাই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ও গ্রামগুলিতে করা হয়েছিল। সবই ছিল মাইক্রো লেভেল গবেষণা প্রচেষ্টা, জানিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতিবিদ হিসাবে জীবনের একেবারে প্রথম দিকে মূলত একজন তাত্ত্বিক ছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এস্থার ডাফ্লো তার ছাত্রী হওয়ার পরে তার কাজের ধরণে পরিবর্তন হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দীপঙ্কর দাশগুপ্ত। এরপরে অভিজিৎ নিখুঁতভাবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির দিকেই নজর দেন।

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা প্রয়াত দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন অর্থনীতিবিদ এবং তাঁর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একজন অর্থনীতিবিদ। অভিরূপ সরকার এবং দীপঙ্কর দাশগুপ্ত দু'জনেই প্রেসিডেন্সি কলেজে দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাত্র ছিলেন।

.