বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ডঃ শাম্মী আহমেদ
ঢাকা/নয়াদিল্লি: বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জন্ম বার্ষিকি উদযাপন হতে চলেছে, সেইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামি লিগেরও জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পরপর তিনবার জয়ের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, দলের জাতীয় সম্মেলন পালন করবে সেদেশের শাসক দল। ভারতের মিত্ররাষ্ট্র বাংলাদেশ, দুই বাংলার সম্পর্কও ভাল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক ভাল। দুই দেশ, দুই বাংলার সম্পর্ক নিয়ে NDTV BANGLA কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডঃ শাম্মী আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিলেন NDTV BANGLA-এর প্রতিনিধি বীরেন ভট্টাচার্য।
১. ভারত, বাংলাদেশের পারষ্পরিক সম্পর্ক বন্ধুত্ত্বপূর্ণ, অত্যন্ত কাছাকাছি থাকা ভারত-বাংলাদেশ মিত্র রাষ্ট্র, তারপরেও কি মনে হয় না, সম্পর্কটা মাঝেমধ্যেই অম্লমধুর হয়ে যাচ্ছে? যদি হয়ে থাকে তাহলে কেন?
উঃ ভারত বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ২০০১-২০০৬ যে সরকার ছিল, তার জন্য কিছুদিন অম্লমধুর ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হয়ে আওয়ামি লিগ সরকার গঠন করে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়ন সাধিত হয়। বাংলাদেশ যেমন ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র, ঠিক আওয়ামি লিগ একটি দল হিসেবেও ভারতের বন্ধু । কাজেই সম্পর্ক অম্লমধুর হওয়ার কিছু নেই।
২. রোহিঙ্গাদের নিয়ে কী অবস্থান শেখ হাসিনা সরকারের
উঃ রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। রোহিঙ্গাদেরকে মায়ানমার সরকার ফেরত নেবে বলে বিশ্বাস করি। ফেরত নেয়ার ব্যাপারটি মায়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে । মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভরনপোষণ করা হচ্ছে, তবে শীঘ্রই মায়ানমার ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।
৩. তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যত কী, কোন পথে সমাধান
উঃ তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। আশা করি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিদি বাংলাদেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে অচিরেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
৪. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক ভাল, তবে তিস্তা নয়, তিনি অন্য জায়গার জল দিতে রাজি, এই নিয়ে দুই বাংলার শাসকের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে, এর শেষ কোথায়, বা কীভাবে সমাধান
উঃ সমাধানের পথ আলোচনা, যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বাংলাদেশের পরম বন্ধু। তিনি সমাধান করবেন এবং তা দ্রুত আলোর মুখ দেখবে। মমতা দিদিও, জানেন বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে পছন্দ করে।
৫. বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার একটি অন্যতম বড় ইস্যু, গরু পাচার আটকাতে সীমান্ত কড়া নজরদারি চালানো হয়েছে ভারতের তরফে, বাংলাদেশের তরফে কি এনিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
উঃ বাংলাদেশের অবস্থান এই ব্যাপারে পরিষ্কার। সীমান্তে চোরাচালানে কঠোর বাংলাদেশ। কোনও অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না।
৬. বাংলাদেশে একাধিকবার ব্লগার, লেখক, উদারমনস্করা আক্রান্ত হওয়ার খবরে চমকে উঠেছে বিশ্ব, এ নিয়ে সরকারের কোনও উদ্যোগ বা পদক্ষেপ রয়েছে কি, ব্লগার, উদারমনস্কদের নিরাপত্তা দিতে বা তাঁদের লেখা, চিন্তাধারা যাতে ব্যাহত না হয়, তারজন্য বাংলাদেশ সরকার কী ভাবছে?
উ: ব্লগার হত্যায় কোনও আসামি ছাড় পাবে না। বাংলাদেশ সরকার তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ অনুকরণীয়। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, যারা ব্লগার হত্যায় জড়িত ছিল।
৭. পরপর তিনবার জয়, জাতীয় সংসদের নির্বাচনের হ্যাটট্রিক আওয়ামী লীগের, কোন যাদুমন্ত্রে সাফল্য
উঃ আসলে শেখ হাসিনার নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়াটাই শেখ হাসিনার জাদুমন্ত্র। উনি খুব কর্মঠ এবং পরিশ্রমী। ওনার দেশ নিয়ে ভাবনা, উনাকে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বই মূল উপাদান ।
৮. বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকি আর কিছু দূরেই, আওয়ামী লীগের কী কর্মসূচী
উঃ বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ বছরব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উপকমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে সেমিনার করা, বিভিন্ন ডাক টিকিট, বিদেশে রাস্তার নামকরণ, এবং বর্হিবিশ্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী কর্নার স্থাপনসহ নানাবিধ কাজ করা হবে।
৯. মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকিতে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হতে পারে
উঃ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মুল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বলে আমরা আশা করছি। এছাড়া প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা হবে, পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ, শর্টফিল্ম, গানের এলবাম প্রকাশ, চিত্র প্রদর্শনী, আর্ট এক্জিবিশনসহ নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের সেরা এবং সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণভাবেই মুজিবের জন্মশতবর্ষ উৎযাপন করা হবে।
১০. শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারী কে
উঃ শেখ হাসিনার পর কে হবেন উত্তরাধিকারী তা সময় বলে দেবে।
(ইমেলে নেওয়া সাক্ষাৎকার)
(সাক্ষাৎকারটি নিতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন জসীমউদ্দিন আকন্দ রনি)
(পশ্চিমবঙ্গ বানানবিধি মেনে সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছে)