টাকা তুলতে ইয়েস ব্যাঙ্ক গ্রাহকরা এটিএম-এর বাইরে লাইনে দাঁড়ালেও অমিল নগদ।
হাইলাইটস
- ক্যাশলেস ইয়েস ব্যাঙ্ক এটিএম, বন্ধ অনলাইন লেনদেন
- মাসিক দেনাপাওনা মেটাতে ভরসা শুধু চেক
- চরম হয়রানির মুখে গ্রাহকরা
নয়াদিল্লি: বড়সড় আর্থিক সঙ্কটের মুখে দেশের চতুর্থ বেসরকারি ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্ক (Yes Bank Crisis)। বিরোধীদের কাছে এখন "নো ব্যাঙ্ক"। অর্থাৎ নগদহীন ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্ককে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সক্রিয় হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, এসবিআই ও অর্থ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নির্দেশে লাগু হয়েছে একাধিক বিধি-নিষেধ। রাতারাতি এই নিষেধাজ্ঞার জেরে হেনস্থার মুখে সেই ব্যাঙ্কের কয়েক লক্ষ গ্রাহক। কিছু ক্ষেত্রে ব্লক এটিএম কার্ড, কোথাও আবার অনলাইন লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা (Block Online Transaction)। ফলে মাসের প্রথম সপ্তাহের এই বিধিনিষেধের জালে পড়ে অনিশ্চিত গ্রাহকদের মাসিক লেনদেন। শনিবার আবার সেই ব্যাঙ্কের একাধিক এটিএম কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। প্রয়োজনীয় নগদ লাভের আশায় সেই লাইন পড়লেও, নজরে এসেছে ধূসর অর্থাৎ 'নো ক্যাশ' নোটিশ (No Cash at ATM)। ফলে উদ্বিগ্ন মুখেই ফিরতে হয়েছে গ্রাহকদের। তবে চেকের মাধ্যমে নগদ ৫০ হাজার (Withdrawal through Check) অবধি তোলায় কোনও অসুবিধার মুখে পড়েননি গ্রাহকরা। এমন দাবি শনিবার করেছেন মধ্য দিল্লির অনেক ইয়েস ব্যাঙ্ক গ্রাহক।
প্রার্থী কি কম পড়িয়াছে? ভোটে দাঁড়াতে ড্রপবাক্সে বায়োডাটা ফেলতে আবেদন বিজেপির
কিন্তু পেপারলেস লেনদেনের ক্ষেত্রে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। অনলাইন লেনদেন কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে সাড়া দিচ্ছে না ইয়েস ব্যাঙ্ক। অভিযোগ, ব্লক করে দেওয়া হয়েছে কার্ড। বিশেষ করে যাদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ বেতন পড়ে ইয়েস ব্যাঙ্কে, তাঁদের দুর্ভোগ চরমে। বিদ্যুতের বিল থেকে জীবনবিমার প্রিমিয়াম শোধ, সবই অনলাইনে করে থাকেন সাংবাদিক মধুরিমা দত্ত। শুক্রবার রাতে সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে অচল নেট ব্যাঙ্কিং। অর্থাৎ অনলাইন লেনদেন ব্লক করা। বিপদে-আপদে ঘরে নগদ দরকার। সেই লক্ষে ওই তরুণী সাংবাদিক এটিএম থেকে নগদ তুলতে গিয়ে দেখেন, বাতিল লেনদেন। অর্থাৎ ব্লক এটিএম কার্ডও। এই অবস্থায় অথৈ জলে পড়া মধুরিমার অভিযোগ, "এযাবৎকাল মাসিক লেনদেনের সব কাজ আমার স্যালারি আকাউন্ট অর্থাৎ ইয়েস ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করে আসি। অতএব তৃতীয় পক্ষ, সবার কাছে সেই অ্যাকাউন্টেরই তথ্য আছে। হঠাৎ করে কোনওরকম পূর্বাভাস ছাড়া এমন বিধিনিষেধের চক্করে পড়ে অনিশ্চয়তার মুখে মাসকাবারি হিসেব।" একই দাবি করেছেন, অপর এক সাংবাদিক সুচরিতা সেন।
ইয়েস ব্যাংকের শেয়ার কিনতে চায় এসবিআই, সোমবারের মধ্যে করতে হবে আবেদন
মধুরিমার মতোই তাঁর আর্থিক লেনদেনের সবকিছু নির্ভরশীল ইয়েস ব্যাঙ্কের ওপর। কিন্তু অনলাইন লেনদেন বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে তাঁরও মাসিক লেনদেনের হিসেব। কর্মরত সংস্থাকে বলে বিকল্প ব্যাঙ্কে বেতন ফেলার ব্যবস্থা করানোই অনেকের কাছে পথ এখন। কিন্তু সেটাও সময় সাপেক্ষ! ততদিন? এহেন গ্রাহক হেনস্থার সুরাহা কী? উত্তর নেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, অর্থ মন্ত্রক কিংবা ইয়েস ব্যাঙ্কের কাছেও। যদিও, তাঁদের কাছে বিকল্প থাকছে চেকে নগদ তোলার। কিন্তু এই বিকল্প প্রসঙ্গে ওই দুই নাগরিকের দাবি, "ঘর এবং পেশা; এই দুটো সামলে ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়ে চেকে নগদ তোলা দুরুহ ব্যাপার। একান্তই কোনও বিকল্প না থাকলে, কোনও একটার সঙ্গে আপস করে সেই কাজটা করতে হবে। এদিকে, চেকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নগদ হাতে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে দিল্লির গোলে বাজার ইয়েস ব্যাঙ্কের শাখার গ্রাহক ললিত কুমার বলেছেন, আমার ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং কাজ করছে না। ক্রেডিট কার্ডও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমি বাধ্য হলাম চেকে নগদ তুলতে। একই অবস্থা দিল্লি লাগোয়া গাজিয়াবাদের এটিএমগুলোর। বেশিরভাগ এটিএম কাউন্টারেই 'নো ক্যাশ' নোটিশ। আরও করুণ অবস্থা প্রবীণ নাগরিকদের। পার্লামেন্ট স্ট্রিটের এক পোস্ট অফিসে বোর্ড ঝোলানো ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক ভাঙানোর কাজ আপাতত বন্ধ। ফলে অথৈ জলে প্রবীণদের বার্ধক্যকালীন সুযোগ-সুবিধা সম্বন্ধীয় অনুদান।
জানা গিয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।এর মধ্যে মোরাাটরিয়াম ও ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণের ব্যাবস্থা করিয়ে কিছুটা সুরাহার পথ খুঁজতে সক্রিয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।