কুমীরই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান, শৈশব থেকে যৌবন উত্তীর্ণ হওয়ার পথে বন্যপ্রাণিরাই ছিল সবথেকে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা, জীবন শেষও হয়েছে বন্যপ্রাণির হামলাতেই। সেই অস্ট্রেলিয়ান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ এবং সেলিব্রিটি স্টিভ আরউইনের (Steve Irwin) অস্ট্রেলিয়ার চিড়িয়াখানায় কাটানো নানা মুহূর্ত, তাঁর কাজ ও স্মৃতির উদ্দেশ্যেই আজ বিশেষ সম্মান প্রদান করেছেন গুগল, তাঁদের গুগল ডুডলের (Google Doodle) মধ্য দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার চিড়িয়াখানায় তাঁর জীবনের নানা সময় ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি পশু রাজ্যে তাঁর অবাধ বিচরণ ও প্রেমই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ডুডলের মধ্যে দিয়ে। স্টিভ আরউইনের বন্যপ্রাণি প্রেমের নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর বাবা-মা বব এবং লিন আরউইন। ছেলে স্টিভের ছ'বছরের জন্মদিনে ১১ ফুট লম্বা অজগর উপহার দিয়েছিলেন তাঁরা। পরে আরউইন পরিবার অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে আরউইন পরিবার একটি সরীসৃপ উদ্যান উদ্বোধন করেন, যা বিয়ারওয়াহ রেপটাইল পার্ক নামে পরিচিত।
গুমনামি বাবাকে নেতাজি প্রমাণ করার অশুভ প্রচার চলছে: নেতাজির পরিবার
স্টিভ আরউইনের যখন ৯ বছর বয়স, তখন থেকেই কুমীরদের সঙ্গে তাঁর অবাধ সখ্যতা। কুইন্সল্যান্ডের ইস্ট কোস্ট কুমির ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রামের (Queensland's East Coast Crocodile Management Program) স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন তিনি। পৃথিবীর সবথেকে বড় জীবন্ত সরীসৃপ অর্থাৎ নোনাজলের বিপন্ন কুমীরদের (endangered saltwater crocodiles) ধরা এবং সেই কুমীরদের সঠিক জায়গায় স্থানান্তরিত করতে সহায়তা করতেন স্টিভ। স্টিভ আরউইন এই পারিবারিক পার্ক পরিচালনা করতে শুরু করেছিলেন, পরবর্তীকালে এর নামকরণ করা হয়েছিল কুইন্সল্যান্ড রেপটাইল অ্যান্ড ফনা পার্ক (Queensland Reptile and Fauna Park) এবং আরও পরে অস্ট্রেলিয়া চিড়িয়াখানা হয়ে ওঠে এটি।
স্টিভের প্রেমের শুরুটাও চিড়িয়াখানাতেই। তাঁর স্ত্রী তেরি যখন চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসতেন তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় স্টিভের। এমনকি নিজেদের মধুচন্দ্রিমাও স্টিভ এবং তেরি কাটিয়েছিলেন কুমীর ধরে, কুমীরদের মধ্যেই।
দেশদ্রোহীদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলার সরকার: ভিএইচপি নেতা
স্টিভ আরউইনের বিখ্যাত টেলিভিশন শো, ‘ক্রোকোডাইল হান্টার' (The Crocodile Hunter) এর প্রথম পর্বের বিষয়ই ছিল স্টিভ ও তাঁর স্ত্রী তেরির মধুচন্দ্রিমায় কুমীরদের একটি ভিডিও ফুটেজ। স্টিভ আরউইন এবং তেরি আরউইন একসঙ্গেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। পরে অবশ্য তাঁদের দুই সন্তান রবার্ট এবং বিন্দিও নিয়মিত এই শোয়ের অংশ হয়ে উঠেছিলেন। স্টিভের ক্রোকোডাইল হান্টার শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই শো দেখতেন।
২০০১ সালে স্টিভ আরউইনকে সারাজীবন সেবা প্রদানের জন্য শতাব্দী পদক সম্মানে ভূষিত করা হয় এবং ২০০৪ সালে স্টিভ অস্ট্রেলিয়ান অফ দ্য ইয়ারের জন্যও মনোনীত হন। হলিউড ওয়াক অফ ফেমের মরণোত্তর সম্মানও প্রদান করা হয়েছে তাঁকে।
স্টিভের নানান কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে নতুন প্রজাতির এক কচ্ছপের আবিষ্কারও। স্টিভ আরউইনের নাম অনুযায়ীই কচ্ছপের এই প্রজাতিটির নাম রাখা হয় ‘আলসেয়া আরুউইনি'। স্টিভ আরউইনের সম্মানে ১৫ নভেম্বর দিনটিকে স্টিভ আরউইন দিবস হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে বিশেষ এই অনুষ্ঠানে বস্তুত তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এই টাকা ব্যবহৃত হয় অস্ট্রেলিয়ার চিড়িয়াখানার ‘ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ারিয়র প্রোগ্রামে'।