This Article is From Apr 21, 2020

লকডাউনের মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে চেয়ে টানা ৩ দিন হাঁটার পর পথেই মৃত্যু কিশোরীর

লকডাউনের মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে চেয়ে টানা ৩ দিন হাঁটার পর, পথেই মৃত্যু ১২ বছরের কিশোরীর

লকডাউনের মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে চেয়ে টানা ৩ দিন হাঁটার পর পথেই মৃত্যু কিশোরীর

কিশোরী জামলো ১৫ এপ্রিল থেকে আরও ১১ জনকে নিয়ে হাঁটা শুরু করে

বিজাপুর, ছত্তিশগড়:

করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) বিরুদ্ধে যখন গোটা দেশ লড়ছে, তখন করোনা নয়, দীর্ঘ পথ হাঁটার পরিশ্রমই প্রাণ কাড়ল ১২ বছরের এক কিশোরীর। বর্তমানে COVID-19 এর সংক্রমণ রুখতে টানা লকডাউন (Coronavirus Lockdown) জারি করা হয়েছে দেশে।ফলে নিজের বাড়ি থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু শ্রমিক। ঠিক সেই রকমই এক বিষাদের গল্প ছত্তিশগড় নিবাসী এই কিশোরীর। অবশ্য না, এটা তো কোনও গল্প নয়, সত্যি, একবারে নির্মম এক সত্যি। জানা গেছে, তেলেঙ্গানার একটি গ্রামে মরিচের শস্যক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিল সে, লকডাউনের জেরে সেখানেই আটকে পড়ে মেয়েটি। কিন্তু ঘরে ফেরার টান উপেক্ষা করতে পারেনি কিছুতেই। তাই কোনও উপায় না দেখে ছোট্ট মেয়েটি আরও ১১ জনকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় থাকা তাঁর বাড়ির উদ্দেশে।

রাষ্ট্রপতি ভবনেও করোনা মৃত্যুদূতের হানা, ১০০-রও বেশি লোক কোয়ারান্টাইন

১৫ এপ্রিল থেকে দিন-রাত এক করে হাঁটতে হাঁটতে শেষপর্যন্ত নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে মুখ থুবড়ে পড়ে সে। পথেই মারা যায় জামলো মাকদম নামের ওই কিশোরী। শুধু পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যে অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। যে বয়সে তাঁর স্কুলে যাওয়ার কথা, বইখাতার মধ্যে মুখ গুঁজে থাকার কথা, সেই সময় শস্যক্ষেতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতো সে। কিন্তু নিজের ঘর আর ঘরে ফেরার টানই অকালে প্রাণ কাড়ল তাঁর। তবে অনেকেই বলছেন, কিশোরীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে ভিলেন আসলে করোনা ভাইরাসই। কেননা করোনা সংক্রমণ রুখতেই লকডাউন চলছিল, আর তার জেরেই ঘর থেকে দূরে আটকে পড়েছিল সে।

দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৮,০০০ ছাড়াল, মৃত ৫৯০, ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মৃত্যু

কিশোরী জামলো ১৫ এপ্রিল থেকে আরও ১১ জনকে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময়, খাবার বা জল, কোনওটাই ঠিকমতো মেলেনি তাঁর। সবাই মিলে টানা তিন দিন হাঁটে তাঁরা, জাতীয় সড়ক দিয়ে নয়, শর্টকাটে যাওয়ার জন্যে বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়েই হাঁটতে থাকে তাঁরা। জামলো যখন তাঁর বাড়ি থেকে আর ১৪ কিলোমিটার দূরে, তখনই হঠাৎ পেটে মারাত্মক ব্যথা অনুভব করে সে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মুখ থুবড়ে পড়ে পথের মধ্যেই। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। জীবদ্দশায় বাড়ি ফেরার জন্যে কোনও গাড়ি না মিললেও,অবশেষে, তাঁর মরদেহ বাড়ি ফেরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে। কী দুঃসহ এই ছবি, জামলোর নিথর দেহ যখন ফিরলো গ্রামে, তখন সেখানকার প্রতিটি মানুষের চোখে জল।

কিশোরীর মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা মারাত্মকভাবে তাঁর শরীরের ডিহাইড্রেটেড অবস্থা এবং অপুষ্টিকেই দায়ী করেছেন। "না, ওই কিশোরীর করোনা ভাইরাস হয়নি। তাঁর শরীরের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ ধরা পড়ে। তাঁর শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতায় দেখা গেছে”,  জানিয়েছেন জেলা মেডিকেল অফিসার বি আর পূজারি।

মেয়ের বাবা অন্দরম মাকদম জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে গত ২ মাস ধরে তেলেঙ্গানায় কাজ করছিল। "ও টানা তিন দিন ধরে হেঁটেছিল। পথেই বমি এবং পেটে ব্যথা শুরু হয় ওর”। মেয়েকে অকালে হারিয়ে পারিবারের মাথায় হাত, নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেন পাথর হয়ে বসে আছেন কিশোরীর বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা। রাজ্য সরকার মেয়েটির পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছে।

দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই এমন ছবি আমরা বারবার দেখছি যে, লকডাউনের ফলে বাড়ি থেকে দূরে আটকে থাকা নিরাশ্রয়  কয়েক হাজার অভিবাসী শ্রমিক অনেক সময়েই দীর্ঘ পথ যাত্রা করার চেষ্টা করেছেন। যদিও সরকারের তরফ থেকে অনেক জায়গাতেই তাঁদের পথের মধ্যেই আটকে আপাতভাবে থাকা-খাওয়ার জায়গা করে দিয়েছে। আবার বহু মানুষের কাছে এখন পথই ঘর, পথই জীবন।আপাতত ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে। কিন্তু লকডাউন উঠে গেলেও যে দেশে গণপরিবহণ আদৌ চালু হবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান অনেকেই। এই সময় বাড়ি থেকে ভিনরাজ্যে আটকে থাকা আর কতজন মানুষ যে এভাবে অকালে ঝরে পড়বে সেই কথা ভেবে শিউরে উঠতে হয়।

.