This Article is From Feb 12, 2019

১৯৮৪, ২০০২, ১৯৯৩ এবং ২০১৩ সালের নরহত্যার ঘটনার গালে একটি সপাট চড় কষাল দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়

এই সব হিংসার ঘটনারই আসল বলি হয়েছি আমরাই। কেউ মুসলমান, কেউ শিখ, কেউ হিন্দু। যারা আসলে সবাই, দিনের শেষে, এই মহান ভারতের নাগরিক।

১৯৮৪, ২০০২, ১৯৯৩ এবং ২০১৩ সালের নরহত্যার ঘটনার গালে একটি সপাট চড় কষাল দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়

এই রায়ের ১৯৩ পাতায় যা লেখা আছে তা সম্ভবত ১৯৮৪ সাল এবং ২০০২ সাল নিয়ে ক্রমাগত বিতর্ক করতে চাওয়া মানুষদের কাজে লাগবে

j0899rlo


বারিস শাহ সে

আজ বারিস শাহ সে কহতি হুঁ-
অপনি কবর সে বোলো!
অওর ইশক কি কিতাব কা
কোই নয়া ভর্ক খোলো!

পঞ্জাব কি এক বেটি রোয়ি থি
তুনে উসকি লম্বি দাস্তাঁ লিখি,
আজ লাখোঁ বেটিয়াঁ রো রহি হেঁ
বারিস শাহ! তুমসে কহে রহি হেঁ

এ দর্দমন্দো কে দোস্ত,
পঞ্জাব কি হালত দেখো
চৌপাল লাশোঁ সে অটা পড়া হে
চনাব লহু সে ভর গয়া হে

কিসি নে পাঁচো দরিয়ায়োঁ মেঁ
জহের মিলা দিয়া হে
অওর ইয়েহি পানি
ধরতি কো সিঞ্চনে লগা হে

ইস ঝরখেজ ধরতি সে
জহের ফুট নিকলা হে
দেখো, সুর্খী কহাঁ তক আহ পহুঁচি!
অওর কহর কহাঁ তক আ পহুঁচা!

ফির জহরিলি হাওয়া
বন-জঙ্গলো মে চলনে লগি
উসমে হর বাঁশ কি বাঁসুরি
জ্যায়সে এক নাগ বনা দি

ইন নাগোঁ নে লোগোঁ কে হোঁট ডস লিয়ে
ফির ইয়ে ডঙ্ক বড়তে চলে গয়ে
অওর দেখতে-দেখতে পঞ্জাব কে
সারে অঙ্গ নীলে পড় গয়ে

 

বিচারপতি এস মুরলীধর এবং বিচারপতি বিনোদ গোয়েল রায় দেওয়ার আগে অমৃতা প্রীতমের লেখা এই কবিতাটি পড়ে শোনান। যে কবিতায় অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরা হয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ পরবর্তী ভয়াবহতাকে। যে হাড়হিম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়ে এসেছে ওই সময় সাধারণ মানুষ, হেরে যাওয়া মানুষ, তুলে ধরা হয়েছে সেইসবও। এক অল্পবয়সী কবি তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে লাহোর থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ওই পালিয়ে আসার সময়টা রাস্তার পাশে দেখেছিলেন লাখ লাখ অসহায় মানুষকে। বেশিরভাগই মৃত। তাদের মধ্যে শিখ, মুসলমান এবং হিন্দু- সব ধর্মের মানুষই ছিল। সেই বিষণ্ণ যাত্রাটিই আসলে একটি কবিতা লিখিয়ে নিয়েছিল ওই কবিকে দিয়ে। ওই ঘটনার ৩৭ বছর বাদে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর এই দেশ সাক্ষী থেকেছিল আরও এক ভয়াবহতার।  দিল্লিতে ২,৭৩৩ জন শিখকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেই সময়। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের ঘরবাড়ি। ক্লীণ্ণ করে দেওয়া হয়েছিল, অন্ধকারে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের জীবনকে। অথচ, দুঃখের বিষয় হল, এই নরহত্যার আসল কাণ্ডারীরা আইনের হাত গলে সেই সময় বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকটি  তদন্ত কমিশন নতুন করে ফের ২০০৫ সালে ঘটনার একুশ বছর বাদে মামলাটি সিবিআইয়ের কাছে নিয়ে যায়। 

 

যাঁদের কথা এই বেলা না বললেই নয়, তাঁরা হলেন- জগদীশ কৌর, নিরপ্রীত কৌর এবং জগশোর সিং। এঁরা না থাকলে হত্যাকারীরা সাজা পেত না কিছুতেই। সিবিআই তো অনেক পরে এসেছে। এবং, এসেছে ভরসার একটি মজবুত স্থান হিসেবেই। মানুষ মুখ খুলতে আরম্ভ করে তারপর। দিল্লির রাজনগরে  পাঁচজন শিখ হত্যার ঘটনায় সজ্জন কুমার সহ অন্য যে পাঁচজনের শাস্তি হল, তারও মূল কারণ এটিই। দুজনের দশ বছরের সাজা। বাকি সকলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। 

 

এই রায়ের ১৯৩ পাতায় যা লেখা আছে তা সম্ভবত ১৯৮৪ সাল এবং ২০০২ সাল নিয়ে ক্রমাগত বিতর্ক করতে চাওয়া মানুষদের কাজে লাগবে।

 

"১৯৮৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারতে স্রেফ দিল্লিতেই ২,৭৩৩ জন এবং গোটা দেশ জুড়ে মোট ৩,৩৫০ জন শিখকে হত্যা করা হয়েছিল নির্মমভাবে। এটা নরহত্যার প্রথম বা শেষ মামলা নয়। দেশভাগের সময় পঞ্জাব, দিল্লি সহ অন্যান্য স্থানে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল একের পর এক, তা ১৯৮৪ সালে নির্দোষ শিখদের হত্যার ঘটনার মতোই নির্মম এবং অমানুষিক। প্রায় এরকম ঘটনারই সাক্ষী এই দেশ হয়েছিল ১৯৯৩ সালের মুম্বাই, ২০০২ সালের গুজরাট, ২০০৮ সালের কন্ধমাল এবং ২০১৩ সালের মুজফফরনগরের ঘটনার মাধ্যমে। আর এই প্রত্যেকটি ঘটনার মধ্যে সবথেকে বড় মিল হল, প্রতিবারই সংখ্যালঘুদের আক্রমণের লক্ষ্য করে তোলা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায়"। 

 

২০০২ সালের ঘটনার প্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে হামেশাই ১৯৮৪ সালের উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আবার ১৯৮৪ সালের কথা বলতে গিয়ে আদালত ২০১৩ সালের মুজফফরনগরে হওয়া দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে ফেলল। আমরা কেউ কখনও এই নিয়ে গলা ফাটাইনি। রায় বেরোনোর পর কেবল মনে হয়েছে কোথাও গিয়ে বোধহয় আমাদের এই অভাবিত মৌনতারও একটি প্রায়শ্চিত্ত হল। আখলাখ থেকে সুবোধ কুমার সিং-এর ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই যাঁরা মৌন হয়ে ছিলেন, যাঁরা ১৯৮৪ সালের ঘটনা নিয়ে মৌন হয়ে ছিলেন, এই রায়ের ফলে একটি স্নান হয়ে গেল যেন তাঁদের। যাঁরা ২০০২ সালের গুজরাটের ঘটনা নিয়ে চুপ করে ছিলেন, অথচ তার আগের গোধরা কাণ্ড নিয়ে তুমুলভাবে সরব, এই রায় একটি কঠোর তর্জনী তুলে ধরল তাঁদের দিকেও। কেউ কেউ আবার বাকি সব কিছু নিয়ে মৌন, কেবল ১৯৯৩ সালের মুম্বাই দাঙ্গা নিয়ে সরব। আসলে, প্রত্যেকেই নিজের সুবিধামতো মুখ খুলেছেন বা বন্ধ রেখেছেন। এই সবক'টি শ্রেণীরই বোধহয় এবার প্রায়শ্চিত্ত করার সময় এল এই রায়ের মাধ্যমেই। 

 

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এই সব হিংসার ঘটনারই আসল বলি হয়েছি আমরাই। মহান ভারতের নাগরিক। যারা হত্যা করেছে এবং যারা প্রাণ দিয়েছে, প্রত্যেকেই তো আসলে তা-ই। মৃত্যু কোনও বিশেষ ধর্ম দেখে আসেনি। মারা গিয়েছে সকলে। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের যে অমোঘ ও হিমশীতল নির্মমতা, এই রায় যেন তার ওপর একটি সপাট চড়। ১৯৮৪ সালে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই এল এই রায়। ঠিক যেমন ২০০২ সালে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির বিরুদ্ধেও একের পর এক রায় এসেছে। সাজাও পেয়েছে ধর্ম-নির্বিশেষে বহু মানুষ। গোধরার ঘটনার জন্য যেমন সাজা পেয়েছেন মুসলমানরা,  ঠিক তেমনই, গুলবার্গ সোসাইটির ঘটনার জন্য শাস্তি হয়েছে হিন্দুদের। খুব খারাপ সময়েও এটুকুই যেন কোথাও গিয়ে কিছুটা হলেও আশার আলোর জন্ম দেয়।

 

রভিশ কুমার:- প্রাইম টাইম অ্যাঙ্কর। তিনবারের রামনাথ গোয়েঙ্কা পুরস্কার বিজয়ী। ২০ বছরের সাংবাদিক জীবন। ব্লগার। ফেসবুক পেজ-  @RavishKaPage , টুইটার-  @ravishndtv , লিখিত বই:- দ্য ফ্রি ভয়েস, ইশক মেঁ শহর হোনা, হিন্দি মেরি জান, ভোজপুরি মেরা ইমান

 

ডিসক্লেমারঃ এই বক্তব্য বক্তার নিজের।  এই লেখায় উল্লেখিত কোনও অংশের ব্যবহারিকতা অথবা সত্যতা  নিয়ে কোনও জবাব দিতেই NDTV বাধ্য নয়। এই লেখায় উল্লেখিত বক্তব্য, তথ্য ইত্যাদি NDTV'র নয়। সেই কারণে, সংশ্লিষ্ট লেখার কোনও অংশ নিয়ে এনডিটিভি জবাব দিতে বাধ্য নয়।

.