This Article is From May 11, 2019

ক্ষমতায় আসতে আমাদের ব্যবহার করেছে তৃণমূল, বলছে নন্দীগ্রাম

বাম সরকারের আমলে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে সালিম গোষ্ঠীর কেমিক্যাল হাবের জন্য ১৪,০০০ একর জমি নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

ক্ষমতায় আসতে আমাদের ব্যবহার করেছে তৃণমূল, বলছে নন্দীগ্রাম
নন্দীগ্রাম:

বাংলার রাজনীতির সঙ্গে যে শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটি হল নন্দীগ্রাম। এখানেই জমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলার রচিত হয়েছিল পরিবর্তনের ব্লুপ্রিন্ট, এককথায় বলা যায়, সিঙ্গুর আন্দোলনের পর ব্যাকফুটে চলে যাওয়া তৎকালীন বাম সরকারে কফিনে নন্দীগ্রাম আন্দোলনই শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। ২০০৭ এর ১৪ মার্চ, নন্দীগ্রামে জমি বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর দেশ জুড়ে ঝড় ওঠে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে নন্দীগ্রামের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরেই ২০১১-এ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটে এবং ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তরপ্রদেশে আসন কমবে বিজেপির, ৭ রাজ্যে শূন্য হবে: মমতা

রবিবার মেদিনীপুরে ভোট। তার আগে কী বলছে নন্দীগ্রামের মানুষজন, কী বলছে স্বজন হারানো লোকজন?  ঘটনার একদশকেরও বেশী  সময় পর তৃণমূলের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের পদোন্নতি দেওয়া এবং সিপিআইএম নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তারা।

এইরকমই এক ব্যক্তি রবীন মণ্ডল। গত দশ বছর ধরে প্রতিদিন তৃণমূল সরকারের তৈরি করা  শহিদ বেদীতে যান তিনি। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল রবীন মণ্ডল বাবা বাদল মণ্ডলের। তিনি বলেন, “তৃণমূল সরকার আমাদের চাকরি দিয়েছে, ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিছু পরিবার সরকারি চাকরিও পেয়েছে। কিন্তু চাকরি বা ক্ষতিপূরণ কোনওটাই আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না, বা শান্তি দিতে পারবে না”। তাঁর কথায়, “বিচারের কী হল, ঘটনায় জড়িত পুলিশ আধিকারিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের শাস্তির কী হল”?

রবিবার জঙ্গলমহল সহ রাজ্যের ৮ আসনে ভোটগ্রহণ

গোবিন্দ দাস ছিলেন নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃতদের তালিকায়।তাঁর ভাইপো বিকাশ দাসের অভিযোগ, গুলি চালানো অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের কারও শাস্তি হল না, স্থানীয় কিছু সিপিআইএম নেতা, যাঁরা এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, হয় তাঁরা শাসকদল তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, নাহলে প্রধান বিরোধী বিজেপিতে। তিনি বলেন, “অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছুই হয় নি। তাঁদের তো স্পর্শও করা হয় নি, বরং সেই সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের পদোন্নতি দিয়েছে তৃণমূল সরকার”।

বিকাশ দাস আরও বলেন, “বড় সিপিআইএম নেতারাও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।আমরা জানিনা, বিচার পাব কিনা”?

পুরুলিয়ায় লাল মাটিতে জোর টক্কর তৃণমূল-বিজেপির

গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি পরিবারের সদস্যদের মুখে একই কথা শোনা গেল।নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল রাখাল গিরির।তাঁর এক আত্মীয় বললেন, “আমরা রিপোর্ট পড়েছি, চার্জশিটে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের নাম দিতে চেয়েছিল সিবিআই, বাধা দিয়েছে তৃণমূল সরকার। পরে দেওয়া হয়”। তাঁর কথায়, “এটা শুধুমাত্র তৃণমূলকে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে ক্ষমতায় আসার পর বিচার নিয়ে তারা চিন্তিত নয়”।

বাম সরকারের আমলে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে সালিম গোষ্ঠীর কেমিক্যাল হাবের জন্য ১৪,০০০ একর জমি নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জমি আন্দোলনের ঝড়ে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস।

“রাজনীতিবিদ হিসেবে নয় আমার স্টারডমের জন্যই মানুষ আমার জনসভায় আসেন”; দেব

২০১১ এ তৃণমূল কংগ্রেসকে যে দুটি আন্দোলন সাহায্য করেছিল, তারমধ্যে রয়েছে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। নন্দীগ্রাম এলাকাটি তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে এলাকায়। তবে দোষীরা শাস্তি না পাওয়ার ক্ষোভ মনের মধ্যে পুষে রেখেছে স্বজন হারানো পরিবারগুলি। ক্ষমতায় আসার পর নন্দীগ্রামে স্বজন হারানো পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

সোনাচূড়া, ভাঙ্গাবেড়া, তেখালি গ্রামগুলির বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতি ফলক তৈরি করা হয়েছে।প্রতি বছর নন্দীগ্রামের ঘটনার দিনে সেই সব মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়।তবে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা স্বজন হারানো পরিবারগুলির জন্য তা যথেষ্ঠ নয়।

কিশোরীর শ্লীলতাহানি! পকসো আইনে মামলা ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে

জমি অধিগ্রহণের জন্য সেই সময় সেই সময় তৈরি হওয়া ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন ভাগচাষি হরিপদ মণ্ডল। তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা কী পেলাম ? তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমাদের ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।নন্দীগ্রামের মানুষ বিচার পায়নি”।

ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিকে সমর্থন জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। দল ক্ষমতায় আসার পর সেই কমিটির বেশীরভাগ সদস্যই তৃণমূলে যোগদান করেন।রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে, সেই কারণে তাদের বেশী কিছু বলার নেই, তবে আইন আইনের পথেই চলবে। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী  বলেন, “আমরা ক্ষোভ বুঝি, কিন্তু বিষয়টি আদালতের হাতে এবং তদন্ত করছে সিবিআই। আমাদের সরকারের এ নিয়ে কিছুই করার নেই”। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেওয়া সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেন নি তিনি।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামের এবং বাংলার মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।তিনি বলেন, “চলতি নির্বাচনেই এর মোক্ষ জবাব পাবে তৃণমূল”।

সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের, মানুষকে ভুল বোঝানোর নীতি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সিঙ্গুর হোক, বা নন্দীগ্রাম, নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তারা সবসময় সব মানুষকে বোকা বানাতে পারবে না। মানুষকে ভুল বোঝানোর ফল পেতে হবে তৃণমূলকে”।

.