মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে তাবরেজ আনসারিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, পরে মৃত্যু হয় তাঁর
হাইলাইটস
- পুলিশি গড়িমসি ও চিকিৎসকদের গাফিলতিই তাবরেজের মৃত্যুর কারণ,বলছে রিপোর্ট
- ঘটনাস্থলে দেরি করে পৌঁছয় পুলিশ ও চিকিৎসকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন নি
- তাঁর বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগ এনে তাঁকে "জয় শ্রী রাম" বলানো হয়
রাঁচি: ঠিক কী কারণে মৃত্যু হল তাবরেজ আনসারির, পুলিশি অবহেলা নাকি চিকিৎসকদের গাফিলতি, তা নিয়েই এখন জলঘোলা হচ্ছে ঝাড়খণ্ডে (Jharkhand)। গত জুন মাসে তাবরেজকে (Tabrez Ansari) একটি মোটর সাইকেল চুরির আভিযোগ ধরে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা। এমনকি তাঁকে "জয় শ্রী রাম" (Jai Shri Ram) বলতেও বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঝাড়খণ্ড প্রশাসনের তরফ থেকে করা প্রাথমিক তদন্ত তাবরেজের মৃত্যুর কারণ হিসাবে পুলিশের অবহেলা এবং চিকিৎসকদের গাফিলতি দুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ গণপিটুনির খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি করে এবং যে চিকিৎসকরা বছর চব্বিশের তাবরেজের চিকিৎসা করেছেন তাঁরাও বিষয়টিকে অত গুরুত্ব দেন নি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
ঝাড়খণ্ডে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু, গ্রেফতার এগারো
ঘটনার সূত্রপাত ১৮ জুন, ওইদিন নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তাবরেজ আনসারি। সেই সময়েই একদল মানুষ তাঁকে মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে হঠাৎই গণপিটুনি দিতে শুরু করে। পরে ওই ঘটনার যে ভিডিও ভাইরাল হয় তাতে দেখা যায় যে তাবরেজকে উত্তেজিত জনতা বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি "জয় শ্রী রাম" এবং “জয় হনুমান” বলতে বাধ্য করছে। যখন গণপিটুনির পর তাবরেজের প্রায় অচৈতন্য অবস্থা তখন সেখানে যায় পুলিশ।
ঝাড়খণ্ডে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু, গ্রেফতার এগারো
তখন গুরুতর আহত তাবরেজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুই চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করার পর জেলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দিয়ে দেন।ঘটনার দিন চারেক পর যখন তাবরেজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন তাঁকে।
“মুসলিম হওয়ায় তাঁকে অত্যন্ত নির্মমভাবে মারধর করা হয়।আমার কেউ নেই, আমার স্বামীই আমার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই”,দাবি করেন মৃত তাবরেজের স্ত্রী শাহিস্তা পারভিন।
গত মঙ্গলবার ভিডিও ম্যাসেজ অ্যাপ টিকটকে ঘুরতে থাকা মৃত তাবরেজ আনসারির ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং “বিদ্বেষমূলক প্রচার”-এর অভিযোগে ১ ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়।শিবসেনার রমেশ সোলাঙ্কির অভিযোগের ভিত্তিতেই মুম্বই পুলিশ ওই ক্লিপটি ডিলিট করে।
ওই ডিলিট করে ভিডিওতে এমন বার্তা ছিল যে, ফয়সাল শেখ, হাসানাইন খান, ফয়েজ বেলুচ, আদনান শেখ ও সাদান ফারুকি নামের ৫ ব্যক্তি বলছে, “নির্দোষ তাবরেজ আনসারিকে তোমরা হয়তো মেরে ফেললে কিন্তু ভবিষ্যতে যদি তাঁর ছেলে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়, তখন যেন বোলো না যে সব মুসলিমই সন্ত্রাসবাদি”।
তৈরি হচ্ছে বালাকোটের মতো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম ভারতীয় ড্রোন
ঘটনার পর ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও দুই পুলিশ আধিকারিক সাসপেন্ড হয়েছেন।তদন্ত সম্পূর্ণ হলে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রিপোর্ট তলব করেছে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট।
তাবরেজ আনসারির মৃত্যুর প্রতিবাদে একটি সভাও ডাকা হয় গত সপ্তাহে, যেখানে উত্তেজিত জনতা বাস লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।এর প্রত্যুত্তরে আবার ৩ জন মুসলিমকে মারধর করা হয়।পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই ঘটনারও তদন্ত শুরু করা হয়েছে।