This Article is From Dec 15, 2018

জাতীয়তাবাদ নয়, মানবতাবাদই অস্ত্র; চিন্ময় গুহর কলমে রম্যাঁ রলাঁ আর রবীন্দ্রনাথের চিঠির দলিল

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর আগে অব্দি মোট ৪৬ খানা চিঠি লিখেছিলেন এঁকে অপরকে দুই বন্ধু চিন্তক। এই বইটিতে রবিঠাকুরের সমস্ত চিঠি এই প্রথমবার প্রকাশ পেল।

জাতীয়তাবাদ নয়, মানবতাবাদই অস্ত্র;  চিন্ময় গুহর কলমে রম্যাঁ রলাঁ আর রবীন্দ্রনাথের চিঠির দলিল
কলকাতা:

কেউ কেউ একরকম ভাবেন… কেউ কেউ বাস্তবিক ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। আসলে যতখানি চোখ দেখে তারও উর্ধ্বে থেকে এক আতশকাঁচ দিয়ে বস্তুত পৃথিবীকে দেখেন কিছু মানুষ, পৃথিবী দেখেন, দেশ দেখেন, রাষ্ট্রযন্ত্র দেখেন, দেখেন দেশের মানুষদের, মানুষদের বৈচিত্র্যকে, বিভেদকেও। কাঁচের নাম চেতনা। যেমন দেখেছিলেন পৃথিবীর দুই বিশ্বের দুই মানুষ, রম্যাঁ রলাঁ আর রবীন্দ্রনাথ। জাতীয়তাবাদ, আগ্রাসী দেশাত্মবোধ আর উগ্র সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে রোজ, অথবা অবসরে যে কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে আমাদের, আজ থেকে প্রায় একশো বছরের কাছাকাছি সময়ে পৃথিবীর দুই প্রান্তে এই দুই চিন্তাবিদ নোবেলজয়ী একই কথা ভেবে গিয়েছেন।

জাতীয়তাবাদ আসলে মানুষকে বিচ্ছিন্নই করে, মানুষকে একসাথে, মানুষকে মানুষের পাশে রাখতে পারে একমাত্র মানবতাবাদ। দেশ, রাষ্ট্রনির্মাণ আর মানব ধর্ম নিয়েই বহু বহু চিঠি লিখেছে রবিঠাকুর রম্যাঁ রলাঁকে, রলাঁও উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের দু'জনের বন্ধুত্ব, চিন্তনের এমন নিবিড় আলাপ আর দেশ ও জাতি বিষয়ক তাঁদের কথোপকথন নিয়েই বিস্তারিত লিখেছেন বিশিষ্ট ফরাসিবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক চিন্ময় গুহ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ও চিন্তক চিন্ময় গুহর বই ‘ব্রিজিং ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট; রবীন্দ্রনাথ অ্যান্ড রম্যাঁ রলাঁ করেস্পন্ডেন্স (১৯১৯-১৯৪০)' সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড প্রকাশনী থেকে। এই সময়ের রাজ্য দেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দুই বিশিষ্ট চিন্তাবিদের ভাবনার এই দলিল আসলে বারেবারেই নগ্ন এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ- এবং তাঁর পরবর্তী সময়েও চিঠিতে গভীর আলোচনা হয়েছে এই দুই মানুষের। কিন্তু ইতিহাস থেকে আমাদের শেখার অভ্যাস যে নেই তা আমাদের রাষ্ট্র যাপনে স্পষ্ট।

c2ea84tg

চিন্ময় গুহ জানান, রবীন্দ্রনাথ আর রম্যাঁ রলাঁ এক বছরের ব্যবধানে দু'জনেই নোবেল সম্মানে ভূষিত হন। যদিও ঠিক ব্যবধান বলা যায় না। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথের নোবেল জয়ের পরের বছরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় নোবেল সম্মান দেওয়া থেকে বিরত থাকে কমিটি। তার পরের বছর নোবেল জেতেন রম্যাঁ রলাঁ। রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ বিষয়ক চিন্তাধারার কথা তাঁর লেখনীর মাধ্যমেই ধরা দেয় রম্যাঁর কাছে। শুরু হয় চিঠির বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই গভীর থেকে গভীরতর হয় চিন্তার আদানপ্রদানে। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের চেতন ও মননের সেই আদানপ্রদান এক অসম্ভব গভীরতায় সমৃদ্ধ। কতকাল আগেও ঠিক দুই দেশের দুই মানুষ একই বিষয়ে কয়েকশো বছর এগিয়ে থেকে চিন্তা করে গিয়েছেন, বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গিয়েছেন। লেখক জানান, মুসোলিনীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ রম্যাঁ রলাঁকে কষ্ট দেয়। বন্ধুত্বের টান রবীন্দ্রনাথকে হাজির করে রলাঁর সুইজারল্যান্ডের বাসভবনে। জাতীয়তাবাদী শক্তি আর বিশ্ব আগ্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে মানবতাবাদের প্রশ্নে মিলে গিয়েছিলেন দুই দেশের সর্বকালের সেরা দুই চিন্তা নায়ক, আন্তর্জাতিক ধর্ম হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন মানবতাকেই। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর আগে অব্দি মোট ৪৬ খানা চিঠি লিখেছিলেন এঁকে অপরকে দুই বন্ধু চিন্তক। এই বইটিতে রবিঠাকুরের সমস্ত চিঠি এই প্রথমবার প্রকাশ পেল। রম্যাঁ রলাঁর চিঠিও নতুন করে অনুবাদ করেছেন চিন্ময় গুহ। 

.