This Article is From Feb 21, 2019

ভাষা দিবস: আমার বোনেরও রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আন্দোলনের নেপথ্যের মেয়েদের গল্প

ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহবুবা খাতুন বলেন, “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকার করিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে মেয়েরা তাঁদের রক্ত বিসর্জন দেবে।” সহজ নয়, আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে এই এগিয়ে থাকা উচ্চারণ মোটেই সহজ ছিল না মেয়েদের পক্ষে।

ভাষা দিবস: আমার বোনেরও রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আন্দোলনের নেপথ্যের মেয়েদের গল্প

International Mother Language Day: বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের মেয়েরা

কলকাতা:

ভাষা আন্দোলনের (International Mother Language Day) কথা পড়তে গিয়ে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারদের শহিদ হওয়ার কথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষিতে ভাষার লড়াইয়ে মহিলাদের ভূমিকা যে কতখানি তীব্র ছিল তা আমাদের সাধারণ জ্ঞানের কোটার বাইরেই রয়ে গিয়েছে। শহিদদের কথা লেখা হলেও কোথাও সেভাবে আন্দোলনকারীদের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ কাজ হয়নি। ১৯৫২-র প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কেবল ভাষার জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া মুসলিম পরিবারের মেয়েদের কথা চাপা পড়েই রয়েছে তাই। উর্দু এবং ইংরাজির পাশাপাশি বাংলাকে ‘রাষ্ট্রভাষা' করার দাবি উঠেছিল করাচিতে তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদের বৈঠকে। সময়টা ১৯৪৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি। বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে ঢাকা এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্য বহু জায়গাতেই সর্বপ্রথম ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই। ওই বছরই, ৩১ জানুয়ারি, ঢাকার বার লাইব্রেরিতে সর্বদলীয় এক সভায় ছাত্রীদের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহবুবা খাতুন, “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকার করিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে মেয়েরা তাঁদের রক্ত বিসর্জন দেবে।” সহজ নয়, আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে এই এগিয়ে থাকা উচ্চারণ মোটেই সহজ ছিল না মেয়েদের পক্ষে।

6ps8hbr8

International Mother Language Day: ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী সুফিয়া কামাল

বাংলা ভাষার আইনি স্বীকৃতির লড়াইয়ের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকার ফজলুল হক সভাগৃহে ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। গণপরিষদের সরকারি ভাষার তালিকা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের মুদ্রা এবং ডাকটিকিটেবাংলা ভাষার ব্যবহার না থাকা, নৌবাহিনীর পরীক্ষা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এবং পূর্বপাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ১১ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানেই ধর্মঘট ডাকা হয়। ধর্মঘট সফলের উদ্দেশ্যে পথে নামেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সেদিনের ধর্মঘটে পিকেটিংয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ যাঁরা করেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই মহিলা। ছিলেন মমতাজ বেগম (Mumtaz Begum), রাজিয়া আফরোজা (Razia Afroza), লিলি খান (Lilly Khan), সামসুন্নাহার (Samshunnahar), খালেদা খানম (khaledha Khanam), মালেকা (Maleka), লুলু বিলকিস (Lulu Bilkis)। শেখ মুজিবুর রহমান (Mujiboor Rahman) লিখেছিলেন, “১১ মার্চ ভোরবেলা থেকে শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন বিল্ডিং এবং অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করল। সকাল ৮ টায় পোস্ট অফিসের সামনে ছাত্রদের উপর ভীষণভাবে লাঠিচার্জ হল। মার খেল কয়েকজন ছাত্রীও....। যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম, সকাল ১০টায় স্কুলের মেয়েরা (মুসলিম গার্লস স্কুল) ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত। আর বিকেল ৪টেয় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটুও ক্লান্ত হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই, পুলিশি জুলুম চলবে না'- এমন কত রকমের স্লোগান।”

আরও পড়ুনঃ ফেসবুকে কাশ্মীরিদের নিয়ে কথা বলার 'শাস্তি', ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হল কলকাতার ছাত্রীকে

ভাষা আন্দোলনে (International Mother Language Day) সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল (Sufia Kamal), রওশন আরা বাচ্চু (Rawshan Ara Bacchu), সুফিয়া আহমেদ (Sufia Ahmed), হালিমা খাতুন (Halima Khatun), সারা তৈফুর (Sara Taifur), নাদেরা বেগম (Nadera Begum)। ভাষা আন্দোলনকারী হিসেবে পুলিশের নজরে ছিলেন নাদেরা। পুলিশি ঘেরাও থেকে বাঁচতে আত্মগোপনকারী নাদেরাকে আশ্রয় দেন আরেক আন্দোলন নেত্রী সুফিয়া কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে (International Mother Language Day Movement) নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে নাদেরাকে জেলে যেতে হয়। এবং স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য রাজবন্দীদের মতো তাঁর উপরেও অত্যাচার চলে সমান তলে। আন্দোলনের আরেক নেত্রী মমতাজ বেগমেরও জোটে কারাবাস। পাল্লা দিয়ে চলে অত্যাচারও। এখানেই শেষ নয়, জেল থেকে ছাড়া পেলে মুমতাজের স্বামী তাঁকে তালাকও দেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন, বকশীবাজার কলেজ, মুসলিম গার্লস স্কুল, বাংলা বাজার গার্লস স্কুল, কামারুন্নেসা গার্লস স্কুলে গিয়ে গিয়ে লাগাতার প্রচার এবং ছাত্রীদের আন্দোলনে সামিল করতে গিয়ে জেল বন্দি হন ছাত্রী ইলা বক্সী, বেনু ধর, হামিদা খাতুনও। সিলেটের ছাত্রী সালেহাকে স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলনের জন্য তিন বছর বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য তাঁর পড়াশোনার সুযোগ আর হয়েই ওঠেনি কখনও। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির সামনেই কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি মিলত। এত সবের পরেও সামাজিক-ধর্মীয় এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের বিধি নিষেধের থেকে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে থাকা মেয়েদের কথা তবু সেভাবে কোথাও নথিবদ্ধ নেই, নেই প্রয়োজনীয় গবেষণাও।

mvdjvil

International Mother Language Day: ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী রওশন আরা বাচ্চু

১৯৫২র ৪ ফেব্রুয়ারি ফের ধর্মঘট, ফের পিকেটিং শুরু হয়। লাগাতার পোস্টার লেখা আর প্রচারের দায়িত্ব পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিরা বেগম আর শরিফা খাতুনের উপরেই। আন্দোলনের (Bangladesh Mother Language Movement) গতিপ্রকৃতি সুবিধার নয় দেখে তদানীন্তন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল সভা এবং শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ছাত্রদের দু'তিনটি দল বাইরে বেরিয়ে যায়। সিদ্ধান্ত মতো, ছাত্রীদের দল বেরিয়েই পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু করে।গুলি চালায় পুলিশ, সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস, এলোপাথাড়ি লাঠি। পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যায় রফিকের। মারা যান সালাম, বরকত জব্বারও। গ্রেফতার হন ২১ জন ছাত্রী। বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পায় কিন্তু আন্দোলনের (International Mother Language Day Movement) নেপথ্যের সকলে নন।

আরও পড়ুনঃ শহরে মহিলাদের জন্য ক্যাবের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

বিখ্যাত হয়ে যাওয়া আব্দুল গফফার চৌধুরীর লেখা গানের যে লাইন গুলো গাওয়া হয় না, “ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি../ একুশে ফেব্রুয়ারি,  ২১ শে ফেব্রুয়ারি/ তুমি আজ জাগো, তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী।” বীর নারীদের কথা তবু কোন অজানা যোগ সাজশে ঢাকা পড়ে যায়। আমাদের দেশে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হওয়া ছেলে জন্মাবে এই অপেক্ষায় বাঙালি কেঁদে মরে। কাঁদতে কাঁদতে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখ দেখতে পায় না বহুকাল আগেই শুধু কাজ না চিন্তায় অনেক অনেক বড় হয়ে থাকা সুফিয়া কামাল হেঁটে যাচ্ছে। হেঁটে যাচ্ছে রওশন আরা বাচ্চু, মুমতাজ বেগম, সামসুন্নাহাররা। বর্ণমালার ঘরে আলো জ্বলছে। ঝলমলে সাম্যের আলো।

.