যাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে, তাঁরা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলেই দাবি করে আসছেন।
হাইলাইটস
- আসামের এনআরসি তালিকায় নেই ১৯ লক্ষের নাম
- এই অবস্থা হিন্দু, মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের
- হিন্দুরা চাইছেন, সিএএ-তে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক
গুয়াহাটি: জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (NRC) বা এনআরসি তালিকার বাইরে নগাঁওয়ের মঞ্জু দেবনাথ। প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ অসমে (Assam) এনআরসি তালিকার বাইরে। সেই ১৯ লক্ষের একজন মঞ্জু দেবনাথ। রাজ্যে একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে প্রায় ছ' মাস হতে চলল। আরও একটা তালিকা প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। তাই কবে সেই সন্ধিক্ষণ, উদ্বেগের প্রহর গুনছেন মঞ্জু দেবী। অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত ওই বৃদ্ধার দাবি, "আগে আমি উদ্বিগ্ন রইতাম। কিন্তু এখন ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।" এনডিটিভিকে তিনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, "অসমে নাগরিকপঞ্জি থেকে আমার মতোই লক্ষাধিক নাম বাদ গিয়েছে। তবে, এখন আমি আশা করছি সিএএ (CAA) আমাকে নাগরিকত্ব দেবে।" গত অগাস্ট মাসে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জি থেকে অসমের ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। তারপর থেকে এক ইঞ্চিও এগোয়নি পরবর্তী তালিকা প্রকাশের কাজ। যদিও, যাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে তাঁরা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলেই দাবি করেছেন। সব নথি তাঁদের কাছে আছে, এমন আবেদনও করা হয়েছে।
কিন্তু তার আগে ফের প্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি জারি করা প্রয়োজন। যা এখন ঠাণ্ডা ঘরে। তাই 'বিতর্কিত' সিএএ ধরে বৈতরণী পার করতে চাইছেন ওই ১৯ লক্ষ মানুষ।
JDU: "যাঁর যেখানে খুশি যেতে পারেন", দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে নীতীশ কুমার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির দাবি, "আমার বাবা ধর্মীয় কারণে এদেশে চলে এসেছিলেন। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও নথি আমার কাছে নেই। আমার মনে হয় সিএএ, এবার বাংলাদেশি তকমা ঘোচাতে আমাদের সাহায্য করবে।" গত দু'মাস ধরে অসমে সিএএ'র বিরোধিতা করে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। এই আইন বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবে। যারা ১৯৭১-এর পর ভারতে এসেছেন। অসম চুক্তি ১৯৮৫, রাজ্য এবং কেন্দ্রের তৎকালীন রাজীব গান্ধি সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
Anti-CAA Rally: "নাগরিকত্ব" নিয়ে অমিত শাহকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
যাতে বলা ছিল, ১৯৭১-এর পর যারা ভারতে ঢুকেছেন, তাঁরা 'অবৈধ' হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ১৯৬৬-এর আগে যারা ঢুকেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার পাবেন। আর ১৯৬৬-১৯৭১-এর মধ্যে যারা ঢুকেছেন, তাঁদের স্ট্যাটাস প্রদান স্থগিত থাকবে। যতক্ষণ না, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। নগাঁও থেকে ৫০ কিমি দূরে হজাই জেলার নীল বাগান। সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েক জনের জটলা প্রতিবেদকের নজরে পড়েছিল। তারাও এনআরসি, তালিকার বাইরে বলেই খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে। তাই এখন তাঁদের কাছে কী বিকল্প? এ বিষয়ে জানতে, অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের দ্বারস্থ তাঁরা।
এনডিটিভিকে বছর ৬৪-এর আবিদ আলি বলেছেন, এনআরসি খসড়ার দু'টি তালিকায় আমার নাম ছিল। কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে চূড়ান্ত তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, "আমার দোষটা কী? হিন্দুদের সিএএ'র রক্ষাকবচ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বেলা কী? আমরাও গরিব! এখন আমরা উপার্জন করবো, না নাগরিকত্ব প্রমাণে ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হব?" ওই মুসলিম গ্রাম থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে হ্যাজং উপজাতির বাস। যারা হিন্দু। তাঁরাও ১৯৬৪-তে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। তাঁরাও অনিশ্চিত, আগামী এনআরসি'র অপেক্ষা করবেন, না সিএএ'র অধীনে তাঁরা সুরক্ষিত? সেই উপজাতির প্রতিনিধি হিসেবে এমন প্রশ্ন তুলেছেন অরণ্য হ্যাজং।
ইতিমধ্যে এনআরসি তালিকার যারা বাইরে, তাঁদের আবেদন শুনতে ২০০টি ফরেনার্স আপিলেট ট্রাইবুনাল গড়েছে আসাম সরকার। ওই রাজ্যের ৩৩টি জেলা জুড়ে এই ট্রাইবুনাল গড়ে তোলা হয়েছে। জানা গেছিল, এনআরসি'র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ৪ মাস তথা ১২০ দিনের মধ্যে ওই ট্রাইবুনালে আবেদন করা যাবে।