আন্ডারসন বলেন, ব্রিজ থেকে নেমে এলে বারো বোতল বিয়ারই তাঁকে দিয়ে দেবেন তিনি
ওয়াশিংটন: সাধারণত এই পথে অন্যদিন যাতাযাত করেন না জেসন গেইবেল এবং কেওয়াম আন্ডারসন। সেন্ট পল, মিন্নয়নে আন্তঃট্যাব 94 তে সেতুটি অতিক্রম করে না। তবে বুধবার সকালে, বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই, বিয়ার ডেলিভারি করতে এই দুইজনই মিনের সেন্ট পল 94 সেতু পারাপার করছিলেন। কাছাকাছি একটি স্পোর্টস বারে বিয়ার চালান সেরে, গেইবেল নীচের ব্যস্ত মহাসড়ক ছেড়ে এই সেতুর উপর দিয়েই ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁদের চোখে পড়ে রাস্তা ছেড়ে সেতুর রেলিং ধরে উলটো দিকে দাঁড়িয়ে আছেন এক ব্যক্তি।
"ভাই, সব ঠিক আছে তো?" বিয়ার ট্রাকের ড্রাইভার গেইবেল ট্রাকের জানলা খুলে প্রশ্ন করেন ওই ব্যক্তিকে। আন্ডারসন এই সময় তার ফোনটিতে ঘটনাটির ভিডিও শুট করেছিলেন। গেইবেল আবার ডাকেন ওই ব্যক্তিকে। ঊত্তর আসে, নিজের জীবন শেষ করতে চলেছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও থামিয়ে 911 নম্বরে ফোন করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, তাঁরা না আসা পর্যন্ত ওইভাবেই অপেক্ষা করতে তাঁদের। কিন্তু সামনে থেকে একজনকে আত্মহত্যা করতে দেখেও অপেক্ষা আর করতে পারছিলেন না আন্ডারসন।
"আমি ভাবছিলাম আমি এই লোকটিকে সাহায্য না করলে এক্ষুনি সে লাফ মেরে দেবে জলে। আমাকে এই লোকটার মন অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে হবে, নাহলে পুলিশ আসার আগেই সব শেষ হয়ে যতে পারে।“- বলেন আন্ডারসন।
তাই পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগে আন্ডারসন কথোপকথন চালিয়ে যান ওই মানুষটির সাথে। কোথায় থাকেন, কী করেন, কী নাম , বাড়িতে সন্তান আছে কিনা- সবই জিজ্ঞাসা করতে থাকেন আন্ডারসন। তিনি জানতে পারেন যে, আদতে শিকাগোর বাসিন্দা ওই ব্যক্তি সেতু থেকে প্রায় চারটি ব্লক পরেই বসবাস করেন। তাঁর একটি সন্তানও আছে। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। সেন্ট পল পুলিশ অফিসার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষরা এসে প্রথমেই সেতুর পূর্বাঞ্চলীয় লেনটি বন্ধ করে দেয়।
আন্ডারসন কিন্তু প্রশ্ন করতেই থাকে ওই ব্যক্তিকে। তিনি কিছু খেতে চান কিনা? আন্ডারসনের সাথে বসে তিনি কিছু খেতে চান কিনা- জিজ্ঞেস করেন তিনি। উত্তরে ওই ব্যক্তি জানান, কিছুই খাবেন না তিনি। "আপনার কি কোনও টাকার প্রয়োজন?"- জিজ্ঞাসা করতেই থাকেন আন্ডারসন। এবারও উত্তর আসে, না। এরপরেই হঠাৎ আন্ডারসন জিজ্ঞেস করেন, তিনি বিয়ার জাতীয় কিছু পান করতে চান কিনা, এতক্ষণে ওই ব্যক্তি উত্তর দেন, বলেন, ‘খেতেই পারি।’
অফিসাররা ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে করতেই আন্ডারসন দৌড়ে যান ট্রাকের কাছে। বারোটি বিয়ার বোতলের একটি প্যাকেট নামিয়ে আনেন। ব্রিজের ধারে মানুষটির কাছে গিয়ে তিনি বলেন, বারোটা বোতলই তিনি তাঁকে দিয়ে দেবেন যদি তিনি নেমে আসতে রাজি হন। সবাইকে তাজ্জব করে দিয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে একজনকে এভাবে বিরত করতে পারার জন্য আন্ডারসনকে অভিনন্দনও জানান পুলিশ আধিকারিকেরা।
"আমি যখনই ওকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তখনই বুঝতে পেরেছি ওকে না নামিয়ে এ জায়গা ছেড়ে আমি যাব না।” বলেন আন্ডারসন। সোশ্যাল মিডিয়াও আন্ডারসনের এই কাজের প্রসংশায় ভরে উঠেছে। আন্ডারসন ও গেইবেলের নিয়োগ কর্তা ব্রেকথ্রু বেভারেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "সব সুপারহিরোর সুপার পাওয়ার থাকে না। কিছু কিছু নায়ক স্রেফ সঠিক সময়ে মানুষের প্রয়োজনীয়তা বুঝে পাশে দাড়ায়।এই দুই হিরো যে আমাদের কর্মী এটা ভেবেই গর্ব হচ্ছে।”
"বিয়ার দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষকে একত্রিত করে চলেছে। আজ এজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে এই বিয়ার"-বলেন পুলিশের মুখপাত্র এর্নস্টার। "আপনার মতো আরো মানুষ দরকার"-ফেসবুকে লিখেছেন একজন। বুধবার আন্ডারসনের সাথে বসে আর বিয়ার খাওয়ার সুযোগ হয়নি ওই ব্যক্তির, কিন্তু আন্ডারসন, যিনি আসলে একজন কৌতুকাভিনেতাও, নিজের শোতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন নতুন আলাপী এই মানুষটিকে। “আসলে ওনার জীবনে বিয়ারের থেকেও বেশি প্রয়োজন হাসির।”- জানান আন্ডারসন।
Click for more
trending news