This Article is From May 07, 2018

চিনের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ নিজেকে 'দত্তক' দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন। মৃত্যুর সময় কাছে থাকে যেন কেউ...

সে পাগলের মতো সঙ্গিনী খুঁজছে! স্ত্রী মারা গেছেন, ছেলে কোনো খোঁজ রাখে না

চিনের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ নিজেকে 'দত্তক' দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন। মৃত্যুর সময় কাছে থাকে  যেন কেউ...

হান জিচেং, 85

চিনের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত একটি বড়ো শহর হল তিয়ানজিন। এই শহরটিকে চিনের অন্যতম প্রধান বন্দর-শহরও বলা হয়ে থাকে। প্রায় আকাশের কাছাকাছি লম্বা একেকটি জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকে শহর ঘিরে। তাদের মাথার ওপর দিয়েই আসে শীত। আসে গ্রীষ্ম। এই শহর দিয়েই সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন এক মানুষ।  মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। শরীর ঈষৎ ন্যুব্জ। তবু, হ্যাট ও কোট পরা মানুষটি সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তাঁর স্ত্রী গত হয়েছে বহুদিন। এক ছেলে আছে বটে, তবে সে কোনও যোগাযোগ রাখে না আর। বয়স ৮৫ পেরিয়েছে। স্মৃতিশক্তি ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে।

মনে রাখার মতো বহু জিনিসই মনে থাকে না আর। শুধু যা মনে থাকে, তা হল একটি চিরকালীন সত্য- এক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আরেকটি মানুষের খুব দরকার। সাইকেল চালাতে চালাতেই কখনও কখনও থেমে যান তিনি। সাইকেল থেকে বের করে আনেন মাঝারি সাইজের এক পোস্টার। তারপর সেই পোস্টার কখনও বাসের গায়ে, কখনও দোকানের দেওয়ালে লাগিয়ে দেন আঠা দিয়ে। সাদা কাগজের উপর নীল কালিতে সেখানে লেখা-  'আমি এক একা মানুষ। বয়স আশির উপর। নিজেই নিজের রান্না, দোকানপাট করে নিতে পারি। তিয়ানজেনের সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে অবসর গ্রহণ করেছি কয়েক বছর আগে। এখন মাসিক পেনশন পাই ৯৫০ ডলার। আমার কোনও রোগভোগ নেই। কিন্তু, 'আপন' বলতেও কেউ নেই আর। আর হয়তো অল্পদিনই বাঁঁচব। একটিই আর চাহিদা আমার। মৃত্যুর সময় সামনে যেন কিছু মানুষ থাকে। আমাকে দত্তক নেবেন'?

হান জিচেং। ১৯৩২ সালে জন্মানো মানুষটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, জাপানিদের চিনের উপর আক্রমণ, দেশজুড়ে হওয়া ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান - সব পেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এমন এক দেশে যেখানে সরকার থেকে কঠোরভাবে 'এক সন্তান নীতি' পালনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রী গত হওয়ার পর তাই অনেকেই একদম একা হয়ে পড়েন। কারণ, সন্তান হয় বাবা-মা'কে দেখে না অথবা তারা থাকে দেশের বাইরে। হান জিচেং এই ১৫ শতাংশেরই একজন।  এই দু:সহ কষ্টবেলা অতিক্রান্ত করাকালীন একটি সময়েই আর না পেরে 'দত্তক' হতে চাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে বিজ্ঞাপনটি দেন তিনি।

ওই বিজ্ঞাপন একটি দোকানের দেওয়ালে লাগানোর সময় এক তরুণী তাঁর ভিডিও করে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেন। বহু মানুষের কাছে তাঁর খবরটি পৌঁছে যায় অত:পর। তারা তাঁর কাছে আসতে থাকে। কিন্তু, সমস্যা হল, জিচেং সাহেব স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, তাঁকে দেখার জন্য বা তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য যতটা অমানুষিক আগ্রহ রয়েছে এই মানুষগুলোর মধ্যে, তার ছিটেফোঁটা নেই তাঁকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে। কথাটা বুঝতে পারার পর থেকেই তিনি এদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। তাঁকে ফোন করলেও আর ফোন তুলতেন না। ধীরে ধীরে ফোন আসা কমে যেতে থাকে। শীত চলে আসে। সাইকেল করে আর পোস্টার নিয়ে বেরোতেন না ৮৫ বছরের বৃদ্ধ। একটি জায়গাতেই তখন কেবল নিজে থেকে ফোন করতেন তিনি। বেজিং-এর লাভ ডেলিভারি হটলাইনে। আত্মহত্যা-প্রবণ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই হটলাইনটি তৈরি করেন জু কুন নামের এক চিনা ভদ্রলোক। বিশেষ করে একা হয়ে যাওয়া বয়স্করাই এই হটলাইনের সাহায্য নেয় বেশি। সেখানেই ফোন করতেন হান। নিজের কথা বলতেন জু কুনকে। রাত ফুরিয়ে আসত...

এইভাবে চলতে চলতেই একদিন লাভ ডেলিভারির নাম্বারেও হানের ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর সকলে জানতে পারল, মানুষটা আর নেই। মার্চ মাসের ঘটনা এটি।

দু'মাস পেরিয়ে গিয়েছে তারপর।  বন্দর শহরের নিশীথের বন্যতার মধ্যেই কখনও বেজে ওঠে বন্দর ছেড়ে চলে যেতে থাকা কোনও জাহাজের সাইরেন। সেই সাইরেনের শব্দ হাওয়ার গা দিয়ে বেয়ে এসে  মিশে যায় একটি সাইকেলের হর্নের ঝংকারের ভিতর।  বহুদিন আগে একজন একা মানুষ, আরেকটি মানুষের খোঁজ পাওয়ার জন্য বাজিয়ে যেত যা। আর সবই মৃত্যুর শব্দ। কেবল এটিই জীবনের... Click for more trending news


.